লাঠিচার্জ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, দাবি পুলিশের

সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ ছাড়াই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আশরাফ হোসেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যদি কাউকে আটক করা হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার (২১ জুন) রাত পৌনে ১০টায় নীলক্ষেত মোড়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আশরাফ হোসেন বলেন, কোনো ধরনের লাঠিচার্জ ছাড়াই তাদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা তা আলোচনা করে বলতে হবে। সারাদিন নীলক্ষেতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি অবরোধ করে রাখা হয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে অনেকবার বৈঠক করে সাতটি দাবির মধ্যে ছয়টি মেনে নেওয়া হয়েছে। ইডেন কলেজ অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের সাথে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা মিটিং করে উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে ছয়টি পয়েন্ট শিক্ষার্থীদের সাথে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু আরেকটি পয়েন্ট অযৌক্তিক হওয়ায় সেটির সাথে তারা একমত হতে পারেননি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সরিয়ে না দিয়েছি তার আগ পর্যন্ত তারা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে রেখেছে। এতে জনগণের চরম ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যাবে এমন আশ্বাস দিয়েও বারবার তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
আন্দোলনে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ভিন্ন মদদ নিয়ে অংশ নিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানতে পেরেছি বামপন্থী কিছু ছাত্র সংগঠন এখানে একত্রিত হয়েছে। তাছাড়া কর্তৃপক্ষেরও আশঙ্কা ছিল যে এরা ছাত্র নয়। এখানে এসে একটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে। আমাদের সতর্কমূলক অবস্থানের জন্য তারা করতে পারেনি। তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক বার্তা দিয়েছি।
শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার সময় সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়েছে- এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন বলেন, এটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা এতে মর্মাহত। সাংবাদিক ভাইয়েরা যারা আমাদের সাথে সারাদিন ছিলেন তারাও আমাদের সহযাত্রী ও সহযোগী ছিলেন। তাদের ওপরে যদি আঘাত আসে সেটা আমি বলব আমার ওপরে আঘাত। না চিনে না বুঝে হয়তো এমন হতে পারে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে আমি অনুরোধ করব, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে রাত ৮টা ১৪ মিনিটের দিকে সড়ক অবরোধ ছেড়ে দেওয়ার জন্য ১০ মিনিট সময় দেয় পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার না করায় অবশেষে লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করা হলেও তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যাওয়ায় নিউমার্কেট এলাকায় পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২ টায় নিউমার্কেটের বলাকা সিনেমা হলের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সাত কলেজের শিক্ষকরা এসে আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের ইডেন কলেজের সামনে নিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের সাথে দেখা করতে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। আন্দোলনরত অন্য শিক্ষার্থীরা ইডেন কলেজের সামনে অবস্থান করে। আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবি মেনে নিলেও একটি মানেনি প্রশাসন৷ তাই এক দফা দাবিতে ইডেন কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে নীলক্ষেতে এসে পুনরায় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা৷
রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য পুলিশ এবং সাত কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকায় তাদের সড়ক থেকে সরানো যায়নি। অবশেষে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়।
আরএইচটি/ওএফ