অনিয়ম প্রতিরোধে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে তদন্ত কমিটি

একাদশ জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার (২৮ মার্চ) ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মোছা. শাহীনুর আক্তার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কমিটির কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের আওতায় লক্ষ্মীপুর সদর ও রায়পুর উপজেলা রয়েছে। এ দুটি উপজেলার মোট ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসন গঠন করা হয়েছে। দুটি উপজেলায় বিচার বিভাগীয় দুইজনকে তদন্ত কমিটির দায়িত্ব দিয়েছে ইসি। লক্ষ্মীপুর জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আক্তার হোসেন এবং লক্ষ্মীপুর জেলার সহকারী জজ মো. ইকবাল হোসাইনকে তদন্ত কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আগামী ১১ এপ্রিল উপনির্বাচন হবে। এ আসনের উপনির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। উপনির্বাচন উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ১৮ মার্চ। বাছাই হয়েছে ১৯ মার্চ এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ২৪ মার্চ।
নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের পদ বাতিল করা হয়। ওই আসন শূন্য ঘোষণা করে ২২ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এতে বলা হয়, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্য নন। রায় ঘোষণার দিন ২৮ জানুয়ারি থেকে ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
অর্থ ও মানবপাচারের মামলায় গত ২৮ জানুয়ারি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন কুয়েতের আদালত। পাশাপাশি তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় তাকে। আটকের সাড়ে সাত মাস আর বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় দণ্ডিত হন পাপুল।
তদন্ত কমিটিকে সহায়তা করতে ডিসি এসপিকে অনুরোধ
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য গাড়ি এবং পুলিশ সদস্য দিতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মোছা. শাহীনুর আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিতে ইসি জানায়-
১. একাদশ জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনে নির্বাচন উপলক্ষে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী আচরণবিধির কোনো বিধানের লঙ্ঘনকে নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য করা হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়কে নির্বাচন পূর্ব সময় বোঝাবে। ফলাফল ঘোষণা বলতে যে তারিখে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়া সম্পর্কিত গেজেট প্রকাশিত হয় ওই তারিখকে বোঝানো হয়েছে।
২. নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে একজন যুগ্ম জেলা জজ ও একজন সহকারী জজের সমন্বয়ে নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
৩. নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ করা গেলে তা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণে বস্তুনিষ্ঠ অবদান রাখবে।
৪. সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির বিশেষ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। নির্বাচনের দিন সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর বিধিগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণান্তে কমিটির পক্ষ থেকে কমিশন বরাবর তাৎক্ষণিক যে সুপারিশ করা হবে, সে সুপারিশ অনুযায়ী যেন নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়, সে লক্ষে কমিটির একাধিক ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
৫. তদন্ত কাজে ঘটনাস্থল অথবা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় নিরাপত্তার স্বার্থে কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর দুইজন অনস্ত্রধারী সদস্য নিয়োগ করা আবশ্যক।
৬. এসব বিবেচনায় কমিটির কর্মকর্তাদের চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুসারে সার্বক্ষণিক জিপগাড়ি/মাইক্রোবাস/স্পিডবোট এবং ক্ষেত্র বিশেষে ট্রাক/পিকআপ ভ্যান/মোটরসাইকেল সরবরাহের জন্য জেলা প্রশাসনকে এবং পুলিশ এস্কর্ট দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
এসআর/এসএসএইচ/এমএমজে