মশার জন্য এ মাসের বাজেট ১৫০০
এডিস মশার বিস্তারে লাগাম টানা যাচ্ছে না। লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ২০১৯ সালের পর এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হয়েছে বলেও দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, এ বছর ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনের মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা এটি। এ নিয়ে এই মৌসুমে ডেঙ্গুতে ৭৩ জনের মৃত্যু হল। ওই ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৮৩৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫১৬ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২০ জন।
মশার উপদ্রব যেখানে লাগামহীন সেখানে মশারি টাঙানো ছাড়া সম্ভব না। তাই বলে ২৪ ঘণ্টা মশারির নিচে থাকাও সম্ভব না। মশা আতঙ্ক থেকে বাঁচতে তাই এক রকম কামান দাগার দশা সাধারণ মানুষের। সুরক্ষায় মশারি, কয়েলের মতো পুরোনো কৌশল বাদেও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে নিজে ও পরিবারকে সুরক্ষা দিতে মশানিরোধ ক্রিম, স্প্রে, অ্যারোসল, মশা মারার ব্যাট, ভ্যাপোরাইজিং মেশিন এবং বিভিন্ন ধরনের লোশন কিনতে মানুষ ভিড় করছেন ফার্মেসি, সুপারশপ ও জেনারেল স্টোরগুলোতে। অনেক দোকান ঘুরেও মিলছে না মশা নিরোধ ঔষধ।
রাজধানীর শ্যামলী, কলেজগেট, পীরেরবাগ মিরপুর ও শ্যাওড়াপারা ঘুরে জানা যায়, হঠাৎ গত এক সপ্তাহ ধরে মশা নিরোধক পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। অধিকাংশ দোকানে চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মুহূর্তে বাজারে এসিআই অ্যারোসল ইনসেক্ট স্প্রে, তাসলা, ফিনিস লিকুইড স্প্রে, হিট মশকিউটে অ্যারোসল স্প্রে, এক্টোনিল ভেট পাউডার মিলছে।
ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত রাজধানীর পরিবারগুলোতে মশা নিরোধে খরচাও বেড়েছে। মশার জন্য প্রতি মাসে অন্তত ১৫০০ টাকা বাজেট রেখেছেন মিরপুরের ৬০ ফিটের বাসিন্দা মাহবুব হোসেন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৯ সালের পর এবার নাকি পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। আমার নিজের একবার, দুই সন্তানের একজনের দুবার ডেঙ্গু হয়েছে। ছেলেকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এবার নিজের ঘর পরিষ্কার রাখা ছাড়াও অডোমাস লোশন ক্রিম, হিট অ্যারোসল মশকিউটে স্প্রে, চার্জেবল ব্যাট কিনেছি ১৪০০ টাকার। এছাড়া কয়েল তো আছেই। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে এক মাসে ১৫০০ টাকার এসব উপকরণ কিনে যতোটা সম্ভব সুরক্ষায় থাকা নিরাপদ বলে মনে করছেন তিনি।
রাজধানীর মিরপুর ৬০ ফিট পীরেরবাগ পাকা মসজিদ এলাকার আহাম্মেদ ঔষধালয় ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়ে জানা যায়, হঠাৎ ক্রেতার চাহিদার কারণে দোকানে নেই কোন মশা নিরোধ ক্রিম লোশন।
মো. হাসিব নামে বিক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবশেষ চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নতুন করে অর্ডার দেওয়া হয়েছে, দোকানে আসতে আরও সময় লাগবে।
আমতলা লাজ ফার্মায় গিয়ে জানা যায়, অডোমোস ক্রিম ও ড. রাজেশ মসকিউটে রেপেলেন্ট ফেব্রিক রোল অন(Dr Rhäzēs Mosquito Repellent Fabric Roll On) ও ক্রিম মিলছে। ফেব্রিক রোল অন ১০০ টাকা ক্রিম ২০০ টাকা, অডোমোস ক্রিম ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেখানেই কথা হয় আনোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডেঙ্গুর হট জোনে আছি। এত মশা ঘরে টেকা যাচ্ছে না। চারদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর শঙ্কা বাড়িয়েছে আতঙ্ক। নিজের সুরক্ষা যতটুকু দেওয়া যায় সেজন্য লাজ ফার্মায় আসা। মশা নিরোধ বা সুরক্ষার জন্য ক্রিম স্প্রে ও কয়েল কিনতে এসেছি।
তবে রাজধানীর শ্যামলী, কলেজগেট এলাকায় অডোমোস ও ফেব্রিক রোল অন মিললেও শ্যাওড়াপারা, উত্তর পীড়ের বাগের অধিকাংশ দোকান ঘুরেও মেলেনি কোনো উপকরণ।
আয়নাল নামে এক ক্রেতা বলেন, মশা মারতে কামান দাগা দশা আমাদের। অনেক দোকানে ঘুরছি কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মশা নিরোধ সব উপকরণ পাচ্ছি না। নানা জায়গায় ঘুরে কয়েকটা উপকরণ কিনেছি। একটা ইলেকট্রিক চার্জেবল ব্যাট দাম সাড়ে চারশ টাকা, একটি হিট অ্যারোসলের দাম ৫৬০ টাকা, কয়েল ৭০/৮০ টাকা, অডোমাস ক্রিম ২০০ টাকা, ডা. রাজেশ ফেব্রিক রোল অন এর দাম ১০০ টাকা।
শহিদুল ইসলাম নামে এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা জানান, হঠাৎ গত এক সপ্তাহ ধরে মশা নিরোধক পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই নেই। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে এখন ক্রেতা আসলেও পণ্য নেই।
উত্তর পীরেরবাগ মাইকের দোকানের গলির স্বপ্ন সুপারশপের বিক্রয় কর্মী জানান, গত সপ্তাহে মশা নিরোধক কোনো পণ্য ছিল না। তবে বিপুলসংখ্যক ক্রেতার চাহিদার কারণে এসিআই ও হিটের অ্যারোসল স্প্রে আনা হয়েছে, রয়েছে অটোমোস ক্রিম। এছাড়া কয়েল ও চার্জেবল ব্যাট বিক্রি বেড়েছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খালিদ মাহমুদ শাকিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মশার বিস্তার যদি রোধ করা না যায়, তাহলে ঘরে ঘরে স্প্রে ব্যবহার বা ফেব্রিক রোল অন বা ক্রিম ব্যবহারে খুব একটা কাজে আসে বলে মনে হয় না। যথাসম্ভব মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানো ও মশা নিরোধ উপকরণ ব্যবহারে সুরক্ষা সম্ভব। তবে বেশি জরুরি মশার বংশ বিস্তাররোধ করা।
জেইউ/এমজে