মিঠুন-আরতি দম্পতিকে সান্ত্বনা দেবে কে?

চট্টগ্রাম নগরের বান্ডেল রোডের সেবক কলোনির বাসিন্দা মিঠুন দাশ ও আরতি দাশ দম্পতি। দুজনেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী। চার মেয়ে নিয়ে সংসার সুখেই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু সুখের দিন তাদের স্থায়ী হলো না। সর্বনাশা আগুন একে একে কেড়ে নিয়েছে তাদের তিন বুকের ধন।
ঘটনা ঘটেছিল গত ২০ জুন। প্রতিদিনের মতো মা-বাবা সন্তানদের রেখে ভোরে কাজে চলে গেছেন। সকালে বের হয়ে যাওয়াতে হয়তো তারা আগুন থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু এখন এই বেঁচে থাকার কোনো মূল্য নেই তাদের জীবনে। সারথি রানী দাশ (১৭), সাকসি রানী দাশ (১৩) ও হ্যাপি রানী দাশ (৬) কে হারিয়ে শোক প্রকাশের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন মিঠুন-আরতি দম্পতি।
জানা যায়, ওই দিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বান্ডেল রোডের ঘরের ভেতরে একটা বিকট শব্দ হয়। শব্দ শুনে ও ঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরে চার মেয়েকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। তার মধ্যে ছোট মেয়ে তিন বছরের সুইটি কিছুটা কম দগ্ধ হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে দুদিন পর ২২ জুন সারথি ও হ্যাপিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা চলতে থাকে সাকসি রানী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুন মারা যায়।
তার সৎকার শেষে বাকি দুই মেয়েকে সুস্থ করতে ঢাকায় চলে যান মিঠুন ও আরতি। এরপর ৩০ জুন আরেক মেয়ে সারথি রানী পরপারে চলে যান। হ্যাপিকে হাসপাতালে রেখে বড় মেয়ের সৎকারে চট্টগ্রামে আসেন বাবা-মা। পুনরায় ঢাকায় ফিরে হ্যাপিকে সুস্থ করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু সেই হ্যাপিও বুধবার (১২ জুলাই) সকালে পরপারে চলে গেছে। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে হ্যাপির মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাবা-মা।
কোতোয়ালি থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন মেজবোন সাকসি সকালে ছোট বোনের জন্য দুধ গরম করে ভুলে চুলা বন্ধ না করে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেক পর বড় বোন সারথী ওঠে ছোট বোনের জন্য পুনরায় দুধ গরম করতে যান। এসময় দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। এতে চার বোন দগ্ধ হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর বাবু জহর লাল হাজারী বলেন, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। তিনজনের অবস্থায় গুরুতর ছিল। দুজনকে ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেই একে একে দুজন মারা যায়। এর আগে চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এমআর/এসএম