জেপি প্রার্থীকে বিধি মেনে চলার নির্দেশ ইসির

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জেপি) মনোনীত বাইসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মো. মহিবুল হোসেনকে (মাহিম) আচরণবিধিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বিধিভঙ্গ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা তলবের পর এই নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদনে যেহেতু আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এসেছে সেহেতু আগামীতে যাতে বিধিভঙ্গ না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখবেন।
সিইসির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেপির প্রার্থী বলেন, আমার কর্তৃক কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ হয়নি এবং আগামীতেও হবে না।
আগামী ১৭ জুলাই ভান্ডারিয়া পৌরসভার নির্বাচন। এর আগে গত ৮ জুলাই জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি ঢাকা থেকে ভান্ডারিয়ায় যান। গাবখান সেতু এলাকা থেকে তার ভান্ডারিয়ার বাসভবন পর্যন্ত নেতাকর্মীরা গাড়ি এবং মোটরসাইকেল বহর নিয়ে আসেন। ওই মিছিল-শোডাউনের খবর প্রকাশ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ওই দিনই ভান্ডারিয়া পৌর এলাকায় জাতীয় পার্টি-জেপি এর কর্মী সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বাই-সাইকেল প্রতীকের পক্ষে যান্ত্রিক যানবাহন, মোটরসাইকেল শোডাউন ও মিছিল করেছেন মর্মে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় প্রার্থীকে শোকজ করে ঘটনাটি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দেয় ইসি। পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি ১৩ এর বিধান ভঙ্গ হয়েছে উল্লেখ করে পিরোজপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার দুই কর্মদিবসের মধ্যে জেপি প্রার্থীকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। গত ১০ জুলাই শোকজের জবাবের পর রিটার্নিং অফিসার প্রার্থীকে সতর্ক করে আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেন।
স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির পরও নির্বাচনী প্রচারণার মাঝপথে নির্বাচন কমিশন জেপি প্রার্থীকে ঢাকায় তলব করে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সিইসির সভাপতিত্বে জেপি প্রার্থী নিজে উপস্থিত থেকে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। এসময়ে সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার মো. আনিসুর রহমান, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাখ্যা শুনানির শুরুতেই ইসি সচিব বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং এবং টিভির ভিডিও ফুটেজ আচরণবিধি ভঙ্গের চিত্র তুলে ধরেন। পরবর্তীতে কমিশন থেকে প্রার্থীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
ঘটনার বিষয়ে প্রার্থী লিখিত বক্তব্যে বলেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রাপ্তির পর আমি যথাসময়ের মধ্যেই আমার ব্যাখ্যা প্রদান করি। আমার জবাবে আমি স্পষ্ট বলেছি যে, এ ঘটনায় আমার সম্পৃক্ততা নেই এবং সেই ঘটনাটি একজন সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য তার নিজের সংসদীয় এলাকায় ব্যক্তিগত সফরমাত্র। এখানে আমার সম্পৃক্ততা নেই এবং আমি নিজে উপস্থিতও ছিলাম না। যে ভিডিও ফুটেজের কথা উল্লেখ্য ছিল অভিযোগে, সেটিও ভান্ডারিয়া পৌরসভার অন্তর্গত কোনো স্থানে ধারণ করা নয়। অতএব আমাকে অভিযোগের দায় থেকে নিস্তার দিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারের নিকট আমি সবিনয় আবেদন করেছিলাম। জেলা কর্মকর্তা বিষয়টি নিষ্পত্তিও করেছেন।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, আপনি নিজে উপস্থিত না থাকলেও আপনার পক্ষে কেউ মিছিল বা শোডাউন করলে তার দায়দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তায়। এমপি মহোদয় ভান্ডারিয়ার ভোটার সেহেতু উনাকে এলাকার বাইরে আমরা থাকতে বলতে পারি না। তিনি যাতে কোনোভাবেই আচরণবিধি ভঙ্গ না করেন, সেই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। ব্যাখ্যা শুনানি শেষে ইসির পক্ষ থেকে আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে লিখিত দেওয়ার জন্য বলা হয়। জেপি প্রার্থী আচরণবিধি মেনে চলবেন-মর্মে লিখিত দেন।
এসআর/এসকেডি