প্রথম দিনেই ফেরি পারাপারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ

সংস্কারকাজ শুরু হওয়ায় ৩ মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকালে সেতুর দুই প্রবেশমুখে ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীতে ফেরি দিয়ে গাড়ি পারাপার শুরু হয়।
এদিকে, কথা ছিল দুই পাশে দুই ফেরি দিয়ে গাড়ি এবং লোকজন পারাপার হবে। এছাড়াও স্ট্যান্ডবাই একটি ফেরি থাকবে। তবে প্রথম দিনে ফেরি ছিল মাত্র একটি। এটি দিয়ে দুই পাশের গাড়ি পারাপার হয়েছে। এ কারণে নদীর দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোকজনকে ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। আবার সেতুতে উঠার পাটাতন পানিতে ডুবে গেছে। এজন্য পানির ওপর দিয়ে লোকজনকে ফেরিতে উঠতে হয়েছে। সবমিলিয়ে নদী পার হতে যাওয়া লোকজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
এছাড়া প্রথম দিন সেতুর দুই পাশে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে সেতু দিয়ে নদী পার হয়েছেন। সংস্কারকাজ পুরোপুরি শুরু হওয়ায় আগামীকাল (বুধবার) থেকে সেই সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে আগামীকাল থেকে আরও দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ভুক্তভোগীদের।

বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে শহর ফেরার সময় শুধু ফেরিতে উঠতে তিন ঘণ্টা লেগেছে। ফেরিঘাট এলাকায় তীব্র যানজট। একটি মাত্র ফেরি। এটি একবার গিয়ে আবার আসতে ঘণ্টার কাছাকাছি লাগছে। আমাদের বোয়ালখালী উপজেলার মানুষের আর দুঃখ যাচ্ছে না।
পিকআপচালক মো. বাহাদুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহর থেকে ভাড়া নিয়ে বোয়ালখালী গিয়েছিলাম। একটি ভাড়া মারতে দিন শেষ হয়ে গেছে। যাওয়া আসায় দুই পাশে ৬ ঘণ্টার মতো যানজটে ছিলাম। এভাবে হলে তো ফেরি দিয়ে ওই এলাকায় চলাচল করা যাবে না।
দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম দিনে একটি ফেরি চালু হয়েছে। বাকিগুলো চালু হয়ে যাবে। তারপর সংকট কেটে যাবে। প্রথম দিকে সবকিছু তো একটু সমস্যা হয়ে থাকে। আর পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে পাটাতনে পানি উঠেছে। পূর্ণিমার জোয়ার শেষ হলে এই সমস্যাও থাকবে না।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বলেন, আগে থেকে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজকে সেতু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিন মাস বন্ধ থাকবে। সেতুটি মেরামতের জন্য ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংস্কার চলাকালীন সময়ে সেতুর বিকল্প ফেরি দিয়ে যান চলাচল করবে। এছাড়া এসময়ে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেল চলাচলও বন্ধ থাকবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের নির্মাণ কাজ আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু দ্রুতগতির ওই রেলপথের চট্টগ্রাম-দোহাজারী অংশে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতু। যার উপর দিয়ে বর্তমানে ১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে ট্রেন। ওই সেতু দিয়ে যেন দ্রুত গতির ট্রেন চলতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কালুরঘাট সেতুর সংস্কার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ। ওই পথে বর্তমানে তিনটি ট্রেন চলাচল করত। এর মধ্যে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও একটি তেলের ট্যাংকার। রেলপথ অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে ওই পথে চলাচল করা ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৪৮ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। যদিও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যেসব টুরিস্ট ট্রেন চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে সেগুলোর পরিচালন গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ব্রড গেজ ট্রেনের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেনের ক্ষেত্রে ৮০ কিলোমিটার।
এমআর/এসকেডি