টিকা উৎপাদনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রযুক্তি চায় বাংলাদেশ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশেই আন্তর্জাতিক মানের টিকা উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে ‘প্রযুক্তি’ চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের অনুমতি দিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে অনুরোধ করেছে সরকার।
শনিবার (৩ এপ্রিল) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিন আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে সরকার একটি চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশকে তাদের প্রযুক্তি দিতে, যাতে দেশেই টিকা উৎপাদন করা যায়। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো উত্তর পাঠায়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আমাদের আছে। সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তাদের কাছে ‘বীজ’ অথবা বিপুল পরিমাণ টিকার সরবরাহ চাওয়া হয়েছে, যাতে কম খরচ ও বহুল ব্যবহৃত এ টিকা উৎপাদন অথবা বোতলজাত করা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানের সে সক্ষমতা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সেসব প্রতিষ্ঠানের কিছু প্ল্যান্ট দেখে এসেছি। টিকা উৎপাদনে তাদের সক্ষমতা রয়েছে।
এর আগে গত ১৮ মার্চ সাভারের জিরাবোতে ইনসেপ্টার ভ্যাকসিন কারখানা পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে মন্ত্রী বলেন, করোনার টিকা তৈরিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ল্যাব (পরীক্ষাগার) প্রয়োজন, যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। এই ল্যাবের একটি অংশ (কেমিক্যাল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। বাকি অংশ অনুমোদন নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের দেশ বিভিন্ন খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ওষুধ খাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বিদেশেও রফতানি করছি। আমাদের দেশের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরি করছে। করোনার টিকা তৈরি করতে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে আমরা পর্যাপ্ত সহযোগিতা করব।
তিনি আরও বলেন, বাল্কে আমরা টিকা তৈরি করতে পারি। তবে এসব আমাদের বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এসব টিকা তৈরির পর সেটি কতটা কার্যকর তাও পরীক্ষা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেশীয়ভাবে টিকা তৈরি করতে পারলে দেশবাসীর মাঝে খুব সহজেই সরবরাহ করতে পারব। আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলো কোভিডের সব ওষুধ তৈরি করছে। দেশেই আমরা এসব ওষুধ পাচ্ছি। আমাদের কোম্পানিগুলো যদি টিকা তৈরি করে, সেগুলোও আমরা নেব। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে আমরা ভারত থেকে টিকা নিয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও আমাদের টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। এই টিকা পেলে ২২ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত বয়সের মানুষকে আমরা সরবরাহ করতে পারব।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ইনসেপ্টার প্রতি বছর ১৮০ মিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এটি আমাদের সবার জন্য সুখবর। সারাবিশ্বে যখন করোনা টিকার বিপুল চাহিদা তৈরি হবে, তখন ওয়ার্ল্ড কমিউনিটি এ সুবিধা ব্যবহার করবে বলে আমরা আশাবাদী।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, ইনসেপ্টা লি. ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে বিপুল আস্থা ও প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই কোম্পানির প্রধান উদ্দেশ্য হলো সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশের সুবিশাল জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি উন্নয়নশীল বিশ্বকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করা। এসময় উপস্থিত ছিলেন- ধামরাই আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ এমপি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
টিআই/আরএইচ