বৃষ্টি হলেই ‘ঈদের আনন্দ’ আসে সিএনজিচালকদের মনে!

Hasnat Nayem

২৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:১৯ এএম


বৃষ্টি হলেই ‘ঈদের আনন্দ’ আসে সিএনজিচালকদের মনে!

সংগৃহীত

বর্ষা শেষ হয়ে চলছে শরৎকাল। তবুও ভাদ্রের আকাশে মেঘের ডাকাডাকি। একবার মেঘ ভেঙে বৃষ্টি পড়া শুরু হলে থামে না কয়েক ঘণ্টাতেও। স্থবিরতা নেমে আসে জনজীবনে। এমন সময়েও যারা কাজে যেতে বাধ্য, তারা যেন পড়েন মহাসাগরে। কর্মজীবীরা যখন এই ‘মহাসাগর’ পাড়ি দিতে সাঁতারে নামেন, তখন ঈদের আনন্দ আসে রাজধানীতে ভাড়ায় চালিত সিএনজিচালকদের মনে।

বৃষ্টির মধ্যে মানুষ যখন বেকায়দায় পড়েন, তখন যাত্রীদের আরও বেকায়দায় ফেলেন সিএনজিচালকরা। যে পথের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা, বৃষ্টির সময় সে পথে আদায় করা হয় ৫০০ টাকা। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের সেই ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করতে হয়।

বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের মতো ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও যখন কোণঠাসা হন, তখন সুযোগ নেন সিএনজিচালকরা। এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সচরাচর যাত্রীরা অভিযোগ করেন না। যে কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন- সিএনজির লুকিং গ্লাস : হাইকোর্টের আদেশ সত্ত্বেও নির্বিকার বিআরটিএ

তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি

গত ১৩ আগস্ট (রোববার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মানুষের অফিসে যাওয়ার তাড়া ছিল। ওই দিন সকালে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে অন্যদিনের তুলনায় রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল কম। রিকশাও ছিল হাতেগোনা। যারা ছিলেন, তারাও ভাড়া চাইছিলেন অনেক। রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোতেও প্রাইভেটকারের চাহিদা ছিল বেশ। বৃষ্টির কারণে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের ব্যবহার ছিল খুবই কম। অন্যদিকে মধ্যবিত্তের ব্যক্তিগত বাহন ‘সিএনজি অটোরিকশা’ নিমিষেই পরিণত হয়েছিল উচ্চবিত্তের বাহনে।

মগবাজার মোড় থেকে যাত্রাবাড়ীর দূরত্ব ৭ কিলোমিটারের মতো। আব্দুল্লাহ আল আমিন প্রায়ই এ পথে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে যাতায়াত করেন। ওই দিন সকাল ১০টায় তিনি ৫০০ টাকায় সিএনজি ভাড়া করে রওনা হন। ভাড়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি গোমড়ামুখে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টি নামলেই যেন ঈদের আনন্দ নামে সিএনজি চালকদের মনে। এখান থেকে আমি প্রায়ই যাত্রাবাড়ীতে মাদ্রাসায় যাই ২০০-২৫০ টাকায়। আজ একটা সিএনজিও যেতে চাইল না। রাস্তা কিন্তু ফাঁকাই, যেতে ৩০ মিনিটও লাগবে না। কিন্তু তারা যাবে না। ভিজে ভিজে কয়েকজন সিএনজি চালকের কাছে গেলাম, সবাই ৫০০-৬০০ টাকা ভাড়া চায়।

আরও পড়ুন- চার বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস

জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল আমিনের ভাড়া করা সিএনজির চালক উজ্জ্বল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টির দিনে খ্যাপ কম হয়, আমাদের জমার টাকা তুলতে হবে তো।

আরেক যাত্রী শাহরিয়াজ ইসলাম সিএনজির ভাড়া ঠিক করতে না পেরে অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ডেকে অফিসে যান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মগবাজার থেকে বারিধারার অফিসে যাব। বৃষ্টির মধ্যে মোটরসাইকেলে তো যাওয়া যাবে না, ভাবলাম সিএনজিতে যাই। কয়েকজন সিএনজি চালককে বললাম, তারা ৪০০-৪৫০ টাকার নিচে যেতে চাইল না। পরে উবার অ্যাপে গাড়ি দেখলাম ৩৫০ টাকা ভাড়া দেখাচ্ছে, সেটা নিয়ে নিলাম।

ঢাকায় ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি

তিনি আরও বলেন, ঢাকার সিএনজিচালকরা একটু সুযোগ পেলেই যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। একটা মানুষের যদি একদিন যাতায়াত করতেই ৫০০-৭০০ টাকা খরচ করতে হয়, তাহলে তার আর থাকে কি।

কেন বৃষ্টির দিনে বেশি ভাড়া দাবি করেন সিএনজিচালকরা

বৃষ্টির দিনে বেশি ভাড়া আদায় করার কারণ জানতে চাইলে সিএনজিচালক জালাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, যখন ঢাকা শহরে বৃষ্টি হয়, তখন পুরো শহরের রাস্তায় পানি জমে যায়। এমনিতেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে। যখন জ্যাম লাগে, ওই একই জায়গায় যেতে তখন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।

আরও পড়ুন- ‘রিট্রেডেড’ টায়ারে আগ্রহ মালিকদের, মারাত্মক ঝুঁকিতে যাত্রী-পণ্য

তিনি বলেন, সিএনজি নিয়ে বের হলে সারা দিনে শুধু খরচই হয় দুই হাজার টাকা। বাসায় অন্তত কিছু টাকা নিয়ে ফিরতে হলে তিন হাজার টাকা ইনকাম করতে হয়। এক বেলার জন্য মালিককে জমা দিতে হয় ১২০০ টাকা। গ্যাস, খাবার ও অন্য খরচসহ এই খরচ দাঁড়ায় দুই হাজার টাকায়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় এদিক-সেদিকেই চলে যায়। বাকি ৯ ঘণ্টার মধ্যে তিন হাজার টাকা ইনকাম করতে হয়। আমরা সব কিছু হিসাব করে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলি। এমনও দিন যায়, সকাল থেকে গাড়ির কাজ করানো হয়েছে দুপুর পর্যন্ত, এর মধ্যে কোনো ইনকাম নেই। কিন্তু সন্ধ্যায় তো মালিকের কাছে ১২০০ টাকা জমা দিতে হবে। তখন তো আমাদের কিছু করার থাকে না। চাবি নিয়েছি মানেই ১২০০ টাকা জমা দিতে হবে। আমি চালাই বা না চালাই, সেটা দেখার বিষয় না মালিকের।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) ট্রাফিক রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. সাকিব হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তায় যখন পানি জমে যায়, তখন কোনো যানবাহন পানির ওপর দিয়ে যেতে চায় না। কোথাও যদি পানির নিচে গর্ত থাকে, সেখানে আমরা সাইন দিয়ে দেই। কিন্তু ফিডার রোডগুলোতে দেওয়া সম্ভব হয় না। সেখানে ডিপ্লয়মেন্ট থাকে না আমাদের। কারণ ট্রাফিকের জনবল খুবই কম।

তিনি বলেন, সড়কে যারা আমাদের ট্রাফিক সদস্য কাজ করেন, তাদের ছাতা ও রেইনকোট দুটোই দেওয়া হয়। রাস্তায় যখন জ্যাম লাগে, তখন তারা ভিজে ভিজে ডিউটি করে। কিন্তু বেশিক্ষণ রেইনকোট পরে থাকা সম্ভব হয় না, কারণ ভেতরে গরম হয়ে যায়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যাতে রাস্তা রানিং রাখা যায়।

দাপট দেখাচ্ছে সিএনজি-রিকশা-ক্ষ্যাপের মোটরসাইকেল

সিএনজি অটোরিকশার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. সাকিব হোসাইন বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ করা। স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। এত যানবাহনের মধ্যে, এত মানুষের মধ্যে কে কোন সমস্যা ফেস করছে সেটা তো আমরা বলতে পারব না। আমাদের কাছে যখন কেউ ভাড়া নিয়ে সরাসরি অভিযোগ করেন, তখন আমরা দেখি যে ওই গাড়ি মিটারে যাচ্ছে না কেন। কেউ মিটারে না গেলে তখন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি। যাত্রীরা অভিযোগ না করলে আমাদের জানার সুযোগ নেই কোথায় সমস্যাটা হচ্ছে।

এমএইচএন/এসএসএইচ/এমজে

Link copied