জলাবদ্ধতা নিরসনে আবারো সিডিএর ওপর দায় চাপালেন চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, জলাবদ্ধতা হলেই নগরবাসী মেয়র ও কাউন্সিলরদের ওপর দায় দেন। কারণ আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ায় মানুষ আমাদের চেনে। অথচ সিটি কর্পোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্বে নেই।
সোমবার (২৮ আগস্ট) নগরের নন্দনকাননের থিয়েটার ইন্সটিটিউটে নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ৩১তম সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে আমরা একাধিক সমন্বয় সভা করেছি। সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) যখন যে প্রতিনিধি আসেন দ্রুততম সময়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তবে, বাস্তবে সিডিএর প্রকল্পের কোনো সুফল এসেছে বলে নগরবাসী মনে করে না। কাউকে দোষারোপ করি না, শুধু সিডিএকে বলতে চাই নগরবাসী আর কষ্ট পেতে চায় না। আপনারা জনগণের মতামতকে মূল্যায়ন করে, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে দ্রুততম সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সম্পন্ন করুন।
তিনি বলেন, বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেকে সিডিএ থেকে অনুমতি নিয়ে রাস্তার একদম কাছেই বাড়ি নির্মাণ করছে। এজন্য সিডিএকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পাশাপাশি চসিক থেকে যাতে অনাপত্তিপত্র নেওয়া হয়।
মেয়র রেজাউল বলেন, কর্ণফুলী টানেল, নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পসহ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কারণে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের নেওয়া নানা প্রকল্পের কারণে চট্টগ্রামের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক গুরুত্বকে কাজে লাগানো গেলে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিশন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তবে আমাদের সামনে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যা আর জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে ঘিরে বাংলাদেশের ভাগ্যবদলের যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়নে সবগুলো সরকারি সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।
কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, কাউন্সিলররা স্ব-স্ব এলাকায় চলমান প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকৌশল বিভাগ থেকে সংগ্রহ করে ঠিকাদাররা কাজ ঠিকমতো করছে কি না তা যাচাই করবেন। চট্টগ্রামকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর যে উন্নয়ন পরিকল্পনা তা তৃণমূল পর্যায় থেকে সফল করতে কাউন্সিলরদের ভূমিকা রাখতে হবে।
‘শীতকাল আসছে। মশার প্রাদুর্ভাব বাড়বে। মশা নিয়ন্ত্রণে চসিকের কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে মনিটরিং করবেন। এছাড়া যেসব ওয়ার্ডে পাহাড় আছে সেসব ওয়ার্ডে পাহাড়ের পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের পাহাড় ধস থেকে বাঁচাতে কাউন্সিলরদের ভূমিকা রাখতে হবে। পরিচ্ছন্ন বিভাগের কোনো কর্মীর অবহেলার প্রমাণ পেলে কাউন্সিলররা জানালে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ড্রেনগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা একটি টিম গঠন করা হবে।’
ট্র্যাফিক বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, আমরা ৫০ ফুটের রাস্তা বানালে, অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাস্তাকে ২০-৩০ ফুট করে ফেলে। অবৈধ মোটর রিকশা এখন জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে দিনরাত গাড়ি পার্কিং করা থাকে। পে-পার্কিং চালু করে অবৈধভাবে রাস্তায় গাড়ি রাখার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
এসময় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, পুলিশের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহ চিহ্নিত করে নীতিমালা প্রণয়ন করে দ্রুততম সময়ে পে-পার্কিং চালু করার প্রস্তুতি চলছে।
সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব খালেদ মাহমুদ, কাউন্সিলরবৃন্দ, চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানরা এবং নগরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমআর/এমএ