চট্টগ্রামের ফার্মেসিতে স্যালাইনের সংকট, দাম বেড়েছে ৩-৫ গুণ

পরিচয় গোপন করে সাধারণ রোগীর স্বজন সেজে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সামনের ফার্মেসিতে স্যালাইন কিনতে যান জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারী। ওইসময় বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে স্যালাইন পাননি তারা। কিছুক্ষণ পরে ওই ফার্মেসিগুলোতে অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। তখন সেখানে পর্যাপ্ত স্যালাইন পাওয়া যায়। পরে তিনি চারটি ফার্মেসিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
গত ৩০ আগস্টের এ ঘটনায় কিছুটা বিস্মিত স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের চাহিদা বাড়ে। এ কারণে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টায় ছিল একটি সিন্ডিকেট। জেলা প্রশাসনের অভিযানে তাদের জরিমানা করা হয়।
ফার্মেসি মালিকরা জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইনের সরবরাহও কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের জানিয়েছেন বর্তমানে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি। এ কারণে স্যালাইনের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজারে স্যালাইনের সরবরাহ কমলেও একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। কিন্তু ফার্মেসিগুলো সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে পাঁচগুণের মতো। একটি স্যালাইন আগে যেখানে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন এগুলোর দাম ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে ফার্মেসি মালিকরা। জেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়েও বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে চট্টগ্রামের ডেঙ্গু রোগী।
তবে সরকারি হাসপাতালে ঠিক এর উল্টো চিত্র। চমেক থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত স্যালাইন। সেখানে কোনো সংকট নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে ১১৪ জনের মতো রোগী বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজারের মতো স্যালাইন মজুত রয়েছে। আমরা আগেভাগে সংগ্রহ করে রেখেছি। এখন এই হাসপাতালে কোনো সংকট নেই।
তবে, সরকারি হাসপাতালের রোগীদের স্যালাইন নিয়ে সমস্যা না হলেও বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি হাসপাতালের রোগীরা। কারণ, তারা টাকা দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে স্যালাইন পাচ্ছেন না। যদিও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি রোগী চিকিৎসা নেয় বেসরকারি হাসপাতালে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চমেক হাসপাতাল এলাকায় দিদারুল আলম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ায় আমার মাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এখন স্যালাইনসহ কয়েকটি ওষুধ কিনতে বেরিয়েছি। ওষুধগুলো সব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। তবে স্যালাইন ৪ দোকানে ফেরত দেওয়ার পর একটি থেকে ৪৮০ টাকা দিয়ে নিয়েছি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বৃহত্তম ওষুধের পাইকারি বাজার হাজারী গলির ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদ্য বিদায়ী সভাপতি সফিউল আজম বলেন, যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, ফার্মেসিগুলো কোম্পানি থেকে সেই পরিমাণ স্যালাইন পাচ্ছে না। এ কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে পাঁচটি কোম্পানি স্যালাইন প্রস্তুত করে থাকে। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। বাজারে স্যালাইনের সংকট রয়েছে। তবে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। এক দোকানে পাওয়া না গেলেও অন্য দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম বৃদ্ধি এবং মজুতের বিষয়ে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু, সুনির্দিষ্ট তথ্য পাচ্ছি না। তারপরও আমরা সরবরাহ এবং দাম স্বাভাবিক রাখতে অভিযান পরিচালনা করছি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের সবশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, জেলায় এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫২ জন। একই সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ২৬৬ জন।
এমআর/এমজে