জনশূন্য বইমেলা, বলির পাঁঠা প্রকাশকরা
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া সরকারের কঠোর নির্দেশনার মাঝেও চালু রয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পূর্বঘোষিত নতুন সময় বেলা ১২টায় মেলা শুরু হলেও পাঠক-দর্শনার্থীর দেখা মিলছে না। ফলে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। এজন্য সরকারের ‘সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত’কে দায়ী করছেন তারা।
সোমবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিনে মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে পাঠক-দর্শনার্থীহীন চিত্র চোখে পড়ে। চারদিকে হাতেগোনা কিছু মানুষ দেখা গেলেও তাদের বেশিরভাগই গণমাধ্যমকর্মী ও মেলাসংশ্লিষ্টরা। ফলে অধিকাংশ প্রকাশনীর স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা পার করছেন অলস সময়। শিশুচত্বরেও দেখা মেলেনি শিশুদের। দুপুরে মেলা শুরু হলেও অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল বন্ধ।
এদিকে, রোববার সন্ধ্যায় বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রন্থমেলার বেশকিছু স্টল ও প্যাভিলিয়ন। সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত স্টলগুলোর মেরামতের কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। ঝড়পরবর্তী বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয় অনেক বই। বিশ্বসাহিত্য ভবন প্রকাশনী, কাকলী প্রকাশনী, অন্যপ্রকাশ, আদর্শ প্রকাশনী, আগামী প্রকাশনীসহ বেশকিছু স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীদের বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বই রোদে শুকাতে দিতে দেখা যায়।
জনশূন্য মেলা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বলেন, সমন্বয়হীন সিদ্ধান্তে আমরা বলির পাঁঠা হয়েছি। যেখানে গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে সেখানে কীভাবে বইমেলায় পাঠক-দর্শনার্থী আসবে? প্রতিদিন স্টলের পেছনে যে পরিমাণ খরচ সেই টাকা উঠবে না, অন্যান্য খরচ তো রয়েছে।
এদিকে, গণপরিবহন না থাকায় মেলায় আসতে চরম ভোগান্তির কথা জানান বিভিন্ন স্টলের খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মীরা। পালক পাবলিশার্সের বিক্রয়কর্মী বেলাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, আসাদগেট থেকে হেঁটে বইমেলা পর্যন্ত এসেছি। আমাদের অনেকে আরও দূর-দূরান্ত থেকে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে মেলায় এসেছেন।
পার্ল পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী মুনতাসির ফাহাদ বলেন, যেখানে বইমেলায় আসতে খরচ হতো ৩০ টাকা, সেখানে আজ মগবাজার থেকে ৪৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ রেখে বইমেলা চালানোর সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত।
গণপরিবহন না থাকায় মেলার নারী বিক্রয়কর্মীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। মেহেনাজ শারমিন বলেন, অনেকটা রাস্তা হেঁটে ও রিকশাযোগে মেলায় আসতে হয়েছে। মেলার পুরো সময় যদি গণপরিবহন বন্ধ থাকে তাহলে প্রতিদিন এভাবে আসা-যাওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে, আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকাশনী তাদের বিক্রয়কর্মীদের ছাঁটাই করছে। যারা কাজ করছেন তারাও ছাঁটাই আতঙ্কে রয়েছেন। অনিন্দ্য প্রকাশনী, অবসর প্রকাশনী, পাঞ্জেরী প্রকাশনী, কলি প্রকাশনী, পার্ল পাবলিকেশন্স, বিকাশসহ অসংখ্য স্টলেই কমিয়ে আনা হয়েছে খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় সরকারের দেওয়া নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বইমেলা চলবে বলে জানায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অমর একুশে বইমেলার কার্যক্রম চলবে।
করোনার কারণে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এ বছর ১৮ মার্চ শুরু হয় বইমেলা। ওইদিন বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে মেলা। অন্যান্য দিনগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলে। কিন্তু দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে ৩১ মার্চ বইমেলার সূচি পরিবর্তন করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করা হয়।
১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
আরএইচটি/এমএআর