চাঞ্চল্যকর রুবেল হত্যা : যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

১৯৯৬ সালে রাজধানীর আর কে মিশন রোডের আলোচিত কলেজছাত্র রুবেল হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আরশাদ ওরফে আসাদকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। দীর্ঘ ২৬ বছর পর সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২ এর একটি দল।
র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র এএসপি শিহাব করিম জানান, রুবেল হত্যার ঘটনায় ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিমের মা নিজে বাদী হয়ে হত্যায় জড়িত থাকা ‘তিন ভাই গ্রুপ’ এর লিডার মামুনসহ আরও কয়েক জনের নামে ডিএমপির ডেমরা থানায় মামলা হয়।
এই গ্রুপের প্রধান মামুন ও তার সহযোগীরা অবাধে গোপিবাগ ও গোলাপবাগ এলাকায় মদ, গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করতো। এলাকার উঠতি কিশোররা তাদের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে সেবন করে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতো।
হত্যার শিকার এনামুল ইসলাম রুবেল (২০) গোলাপবাগ ও গোপীবাগ এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল করে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও তার বন্ধুরা মিলে ‘সন্ত্রাস নির্মূল প্রতিরোধ কমিটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এরপর রুবেল ও তার বন্ধুরা গোপীবাগ ও গোলাপবাগ এলাকায় ‘তিন ভাই গ্রুপ’ এর সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের তাদের অবৈধ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে চাপ সৃষ্টি করে।
ভুক্তভোগী রুবেলের প্রতিষ্ঠিত ‘সন্ত্রাস নির্মূল প্রতিরোধ কমিটি’র চাপে মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকায় টিকতে না পেরে পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলে যায় এবং সেখানে একইভাবে মাদক বিক্রি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে শুরু করে। পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক বিক্রির কথা শুনে রুবেল ও তার বন্ধুরা সেখানে গিয়ে মাদক ব্যবসা বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ফলে ‘তিন ভাই গ্রুপ’ এর সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে ‘সন্ত্রাস নির্মূল প্রতিরোধ কমিটি’ এর প্রধান এনামুল ইসলাম রুবেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৫ জানুয়ারি ডেমরা থানাধীন হোটেল সি-কুইনের সামনে রুবেলকে ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে রাস্তায় ফেলে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রুবেল মারা যায়। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের মা নিজে বাদী হয়ে ডেমরা থানায় মামলা করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার অন্যতম গ্রেপ্তার আরশাদ ওরফে আসাদ ১৮ মাস কারাভোগ করার পর নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে আদালত তাকে জামিন দেয়। কিন্তু পরে তিনি আর আদালতে হাজিরা দেননি। পলাতক থাকাবস্থায় আদালত মামলার দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর আরশাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সত্যতা পাওয়ায় ৩০২/৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়াসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করেন।
রায়ের পর থেকে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি আরশাদ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে। ২৬ বছর পলাতক থাকার পর ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গতরাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আত্মগোপনে থাকাকালীন তিনি পরিচয় লুকিয়ে বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রয়ের কাজ করতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/এসএম