উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রকৃতিতে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ, নদী শাসন ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন প্রভাবজনিত কারণে দুর্যোগে বাংলাদেশের বিপদাপন্নতা কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে যেমন জানমালের ক্ষতি হয়েছে, তেমন অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে; যা বাংলাদেশকে তার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। এসব ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, কালবৈশাখি, টর্নেডো, নদী ভাঙন, উপকূল ভাঙন ও খরা ইত্যাদি। ইউরিশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের মাঝামাঝি হওয়ায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। এছাড়াও বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং দারিদ্র্য ও ঘনবসতির দরুন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি ভয়াবহ। ‘ওয়ার্ল্ড রিস্ক রিপোর্ট ২০১১’ অনুযায়ী-দুর্যোগের ঝুঁকি এবং বিপদাপন্নতার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১৫তম।
এমতাবস্থায় সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবাসমূলক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউজ।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় সভার আয়োজন করে লাইট হাউস। ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৩ উদযাপনের অংশ হিসেবে মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ডের প্রধান গোলাম রাব্বানী এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য সচিব ও দৈনিক আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, নাহাবের সমন্বয়কারী মো. রওশন ও সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুল ইসলামসহ লাইট হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন আর রশিদ। তিনি জানান, দুর্যোগের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি মানুষের জীবন ও সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের পথে এক বিশাল অন্তরায়। বিশেষ করে দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য, যারা অত্যন্ত কষ্টার্জিত উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। দুর্যোগের ফলে কেবল দুর্যোগ কবলিত দেশ বা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন নয়, বরং এর ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পরিবর্তিত প্রযুক্তি, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশ ও ভৌগোলিক বিপর্যয়, জলবায়ুর পরিবর্তন, এইচআইভি-এইডসের প্রকোপ, ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয় ও ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ঝুঁকি তীব্রতর করে তুলেছে। পরিবর্তনের এ অব্যাহত ধারা বিশ্ব অর্থনীতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের পথে বিরাট বাধাস্বরূপ।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত, যা জ্বালানি ব্যবহারজনিত কারণে কার্বন নিঃসরণ দ্বারা হয়। দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলো তারাই যারা সমস্যায় সবচেয়ে কম অবদান রেখেছে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে হারুন আর রশিদ জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে, বিশ্বে প্রতি দুই দিনে গড়ে ৩টি উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। বিগত দুই দশকে গড়ে প্রতি বছর বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন মানুষ দুর্যোগে বিশ্বে দুর্যোগে সাড়া প্রদান সক্ষমতা ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচিতে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়।
এসআই/জেডএস