পল্টনে নিহত শামীম যুবদল কর্মী নয়, দাবি পুলিশের

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে নিহত যুবক শামীম মিয়া যুবদল কর্মী নয় বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ জানিয়েছে, শামীম একজন ডাক্তারের গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে নিহতের পিতা ইউসুফ মিয়ার বরাতে এ কথা বলেন ডিএমপি মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন।
ডিসি ফারুক জানান, গতকাল শনিবার বিকেলে পুলিশের উপর বিএনপি নেতাকর্মীদের আক্রমণ চলাকালে শামীম পুলিশ হাসপাতালের সামনের পথ দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় নিহত শামীম স্ট্রোক করে রাস্তায় পড়ে যায়। তখন পুলিশের উপর আক্রমণ করতে আসা বিএনপির নেতাকর্মীদের পদতলে পিষ্ট হয়ে সে রাস্তায় পড়ে থাকে। সেখান থেকে কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে (সিপিএইচ) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক পুলিশের উপমহাপরিদর্শক মো. রেজাউল হায়দার জানান, নিহত যুবকের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
শনিবার বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল সমাবেশ করেছে। এসময় পুলিশি বাধার মুখে বিএনপির নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। ধাওয়া খেয়ে নেতাকর্মীরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে নয়াপল্টন ও পুরানা পল্টন মোড় এবং আশপাশের অন্যান্য স্থানে বিএনপি-পুলিশ-আওয়ামী লীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় বিএনপির বহু নেতাকর্মীর পাশাপাশি পুলিশ ও সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। আমিনুল নামে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যাও করা হয়। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
মহাসমাবেশ পণ্ডের ঘটনায় আজ দেশব্যাপী হরতাল পালনের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর রাতে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন(ব্রিফিং) ডেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, রোববার হরতালের নামে নৈরাজ্য করলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, ‘পল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় বিএনপিসহ আরো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল। অনুমতি গ্রহণের সময় বিএনপি নেতৃবৃন্দ নিজেরাই উল্লেখ্য করেন যে বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত তারা এক থেকে এক লাখ বিশ হাজার লোকের জমায়েত করবেন। তাদের সমাবেশে কেউ যেন বাধাগ্রস্ত না করে এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না চালাতে পারে সেজন্য পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু সকাল ১০ টা নাগাদ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী কাকরাইল মোড় ও এর আশপাশে অবস্থান নেয়। তারা এ সময় বিনা কারণে বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর করে।’
‘তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে অতর্কিত হামলা করে এবং গেইট ভেঙে ফেলে। একপর্যায়ে লাঠিসোঁটা হাতে বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং সেখানেও ভাঙচুর চালায়। অতঃপর পুলিশি বাধার মুখে তারা বাসভবন থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তারা পার্শ্ববর্তী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বাসভবন জাজেস কমপ্লেক্সে আক্রমণ চালায় এবং রিসেপশন কক্ষে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। এ ছাড়া জাজেস কমপ্লেক্সের সিসিটিভি ক্যামেরাসহ আশপাশের পুলিশের শত শত সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।’
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ তাদের(দুষ্কৃতকারী) ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা কাকরাইল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত বেশ কিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আইডিবি ভবনের ভেতরে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। তারা নাইটিঙ্গেল মোড়ে বাসে অগ্নিসংযোগ করে। লিটলস ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে তারা দুজন পুলিশ সদস্যকে রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে প্রহার করে। এই দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে তারা ক্ষান্ত হয়নি, একই সাথে তারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ চালায় এবং ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ করার পর একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ ২৬টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।’
‘তারা রমনা ট্রাফিক ডিসির অফিসে ভাঙচুর করে এবং অনেকগুলো দোকান ভাঙচুর করে, অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ লাইনের ভেতরে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভাঙচুর চালায়। ধ্বংসযজ্ঞের একপর্যায়ে তারা বক্স কালভার্ট রোডে একজন পুলিশকে পিটিয়ে চাপাতি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করেও ন্যাক্কারজনকভাবে ঐ পুলিশ সদস্যকে লাথি মারতে থাকে। এছাড়া তারা পল্টন থানায়ও আক্রমণের চেষ্টা কিরে।’
তিনি বলেন, ‘তারা ট্রাফিক বক্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তিন ঘণ্টা ধরে চলা তাদের ধ্বংসযজ্ঞে পুলিশ ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এবং আক্রমণকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যারা এ ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে যথাযথভাবে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এ লক্ষ্যে ডিএমপি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। হরতাল পালন করা যেমন একটি গণতান্ত্রিক অধিকার তেমনি হরতাল না পালন করাও একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। হরতালেন নামে অনেক ধরনের নৈরাজ্য চালানো হয়ে থাকে। আগামীকাল হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। কেউ যদি হরতালের নামে মানুষের স্বাধীন চলাফেরার ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে তাহলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
কমিশনার বলেন, ‘কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশের যেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে সেই রকমই ব্যবস্থা রাখি। এখানে অতিরিক্ত ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিল না। যতটুকু প্রয়োজন ছিল আমরা ততটুকু রেখেছিলাম এবং পরে কিন্তু পুলিশের অনেক ফোর্স ছিল।’
সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাদের বন্ধু, সাংবাদিকরা জনগণের বন্ধু। এই ঘটনাটি ব্যস্ততার কারণে আমার নজরে এখনো আসেনি। যদি সেই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমএসি/এমজে