টানেলে প্রথম ছয় ঘণ্টায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা টোল আদায়

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হয়েছে শনিবার (২৮ অক্টোবর)। রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে টানেল দিয়ে জনসাধারণের গাড়ি চলাচল শুরু হয়। একই সঙ্গে সকাল ৬টা থেকে দিনব্যাপী চলছে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হরতালের মধ্যেও যথাসময়ে টানেল দিয়ে যান চলাচল শুরু অব্যাহত রয়েছে। এদিন সকালে জুয়েল রানা নামে একজন প্রথম টোল পরিশোধ করে টানেলের আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে যান। এরপর থেকে বেলা ১২টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত টানেল দিয়ে পারাপার হয়েছে ৪৭৮টি গাড়ি এবং টোল আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে টানেলের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা গেছে ২৫৬টি গাড়ি এবং টোল আদায় হয়েছে ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া টানেলের আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা গেছে ২২২টি গাড়ি এবং টোল আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কতৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস ঢাকা পোস্টকে টোল আদায় সংক্রান্ত এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন
এর আগে শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে হুল প্রতিক্ষীত এ টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর দোয়া ও মোনাজাত শেষে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর টানেলের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে রওনা দেয়। বেলা ১২টা ১ মিনিটে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টানেলে টোল দেন প্রধানমন্ত্রী। তার কাছ থেকে টোল গ্রহণ করেন ঝুমুর আক্তার এক নারী। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী নিজের গাড়িসহ বহরে থাকা ২১টির জন্য ৪ হাজার ২০০ টাকা টোল প্রদান করেন।
সেতু কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, টানেলে ১২ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে। এর মধ্যে প্রাইভেটকার ও জিপকে দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসকে ২৫০ টাকা, পিকআপকে ২০০ টাকা, ৩১ বা তার চেয়ে কম সিটের বাসকে ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসকে দিতে হয় ৪০০ টাকা। আবার ৫ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক থেকে টানেলে টোল নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হয়।
এছাড়া ৩ এক্সেল পর্যন্ত ট্রাক চলাচলে টানেলে টোল দিতে হচ্ছে ৮০০ টাকা এবং ৪ এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারকে ১ হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য দিতে ২০০ টাকা করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্ণফুলী নদীর দুই তির সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।
নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসেবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিয়েছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
এমআর/এসএম