অবরোধ : ১৫ মিনিটেই রামপুরা থেকে শাহবাগ!

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রভাব সকালের দিকে তেমনটা দেখা না গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসের স্বল্পতায় বেড়েছে যাত্রী ভোগান্তি। রাস্তায় বের হয়ে অনেকেই গাড়ি পাচ্ছেন না। আর যারাও পাচ্ছেন, গাড়ি কম থাকায় খুব কম সময়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। যাত্রীদের একজন তো ফাঁকা নগরীতে মাত্র ১৫ মিনিটে ব্যস্ততম সড়ক রামপুরা পাড়ি দিয়ে শাহবাগ পৌঁছে যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্ত্যব্যে বের হওয়া যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আজাদুল ইসলাম আদনান, একটি জাতীয় দৈনিকের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে তিনি কাজে করেন। অন্যান্য দিনের মতো তিনি বের হয়েছেন সংবাদের খোঁজে। বেলা ১১টায় রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে ভিক্টর ক্লাসিকে কাকরাইল এবং সেখান থেকে তরঙ্গ বাসে করে শাহবাগের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এরপর মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানেই তিনি পৌঁছে যান তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। যেখানে বাসে করে অন্যান্য সময়ে এইটুকু পথ আসতে সময় লাগত এক থেকে দেড় ঘণ্টা, সেখানে ১৫ মিনিটেই গন্তব্যে পৌঁছে অনেকটাই অবাক তিনি।
আজাদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অ্যাসাইন্টমেন্টের জন্য প্রায় শাহবাগ যেতে হয়। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে, সেখানে আজ মাত্র ১৫ মিনিট লেগেছে। এইটুকু সড়কে প্রতিনিয়ত যেখানে ৫ থেকে ৬টি সিগন্যালে আটকা পড়তে হয়, সেখানে আজ কোনো সিগনালেই পড়তে হয়নি। অধিকাংশ মোড়েই কোনো সিগন্যালের দেখা পাইনি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অবরোধ ডাকলেও তাদের নেতাকর্মীরা যতটুকু দেখলাম মাঠে নেই। তবে যাত্রী এবং চালকের মাঝে একধরনের আতংক দেখেছি। বিশেষ করে যেখানে সংঘর্ষ হয়েছে সেসব সড়কের পাশ দিয়ে গেলে গাড়ির জানালা বন্ধ করে দিচ্ছেন চালকের সহকারী। এতে করে আরও আতংকিত হচ্ছেন যাত্রীরা। এই বুঝি কিছু হলো।
খাইরুল ইসলাম নামক আরেক যাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে টিভিতে দেখলাম সব স্বাভাবিক, কিন্তু আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে এখন ১ ঘণ্টা ধরে হাঁটতেছি, তারপরও একটা গাড়ি পেলাম না। সকালের এই তপ্ত রোদের মধ্যে পিচঢালা রাস্তা দিয়ে ১ ঘণ্টা হাঁটলে কেমন লাগে বলেন?
তিনি বলেন, ঢাকায় গাড়ি আছে, তবে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। আর আমি গতকাল রাতে রাজেন্দ্রপুর গিয়েছিলাম, সকালে আসার পথে গাজীপুর চৌরাস্তায় (সালনা থেকে বাইপাস পর্যন্ত রাস্তায় কোন প্রকার গাড়িই ছিল না)। ঢাকাতেও যে পরিমাণ গাড়ি চলছে এইটাকে কোনো যুক্তিতে স্বাভাবিক বলা হচ্ছে আমার বুঝে আসে না। এমন অবস্থায় পড়তে হবে জানলে রাস্তায় বের হতাম না।
অবরোধের প্রথম দিনে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর ব্যস্ত বাস টার্মিনালগুলোর একটি মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, এখান থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। যাত্রীদের উপস্থিতিও কম, যে অল্প সংখ্যক যাত্রী এসেছেন, বাস না ছাড়ায় তারা যেতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ড এবং সেখানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল পালিত হয়েছে। এরপর রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা করেন, ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ পালন করবে বিএনপি ও এর শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।
অন্যদিকে, সোমবার (৩০ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে সারা দেশে তিন দিনের (৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে তিন দিনের এ কর্মসূচি কীভাবে পালন করা হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানায়নি বিএনপি কিংবা অন্যান্য দলগুলো।
টিআই/এমএ