খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ উদ্বোধন আজ

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্র বন্দরের পণ্য পরিবহনে গতিশীলতা বাড়ানো এবং আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনে উদ্দেশ্যে তৈরি খুলনা-মোংলা রেলপথ উদ্বোধন আজ (বুধবার)।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর রেলযোগাযোগ স্থাপন এবং কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা আন্তঃদেশীয় আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথও আজ উদ্বোধন করা হবে।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় খুলনা-মোংলা রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের উদ্বোধন করবেন।
খুলনা-মোংলা রেলপথটি আজ উদ্বোধন হলেও কবে নাগাদ এই পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এই বিষয়ে খুলনা-মোংলা রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১১টায় এটির উদ্বোধন করবেন। কিন্তু কবে এই পথে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে তা সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে।
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মিয়া জানান, ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর প্রথম দিকে পণ্যবাহী ট্রেন এবং পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে দুই দেশের মধ্যে।
ইতোমধ্যে ২টি রেলপথ নির্মাণ শেষে পথগুলোতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি চালানো সম্পন্ন হয়েছে।
রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খুলনা-মোংলা রেলপথের নির্মাণকাজ তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ১৩ বছরেও হয়নি। পাঁচ দফা সময় বেড়ে চলতি সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটিও সম্ভব হয়নি। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সর্বশেষ পঞ্চম ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। তবে নির্মাণকাজ শেষ করার মেয়াদ চলতি সেপ্টেম্বরে। বাকি এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ হিসেবে ধরা আছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এতে করে সংযোগ লাইনসহ ৯১ কিলোমিটার রেললাইনের জন্য প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে ৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলসংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়ার গঙ্গাসাগর থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। দুই দেশের মধ্যকার এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ৬.৭৮ কিলোমিটার। প্রকল্পটি (বাংলাদেশ অংশ) বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দেড় বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারিসহ নানা সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি তারা।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। রেলপথটি আগরতলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমিয়ে দেবে। প্রকল্পটি চালু হলে ৩১ ঘণ্টার পরিবর্তে এ পথে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা। আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫১৩ কিলোমিটারে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
এমএইচএন/এমজে