জলবায়ু পরিবর্তন : দায় না থাকলেও সবচেয়ে ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দায় তেমন একটা না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। তবে সেই অনুপাতে বাংলাদেশের যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়া উচিত ছিল, তা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, বাংলাদেশে জলবায়ুর কারণে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের উচিত সাধারণ মানুষের মাধ্যমে এ ক্ষতির তালিকা করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘জার্নালিজম ইন দ্যা এজ অব ক্লাইমেট অ্যাকশন : কপ২৮ কাভারেজ স্ট্র্যাটিজিকস অ্যান্ড মেনটরিং’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় বক্তারা এমন আশঙ্কার কথা জানান। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক এমন প্রায় শতাধিকের বেশি সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীর দক্ষতা উন্নয়ন ও মেনটরিং কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল। সমাপনী অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রোম। কর্মশালার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান এবং স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিজে জানতে হবে, এই বিষয়টি সবাইকে জানাতে হবে। মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ করে পৃথিবীকে সুস্থ করতে হবে। দূষণের ক্ষত সারিয়ে তুলতে হবে। যেন আমরা বেচে থাকতে পারি।
তিনি বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দেশের জন্য যে বিষয়গুলো দরকার তা চিহ্নিত করে সমাধানের দিকে যেতে হবে। বিশ্বের জন্যও অবদান রাখতে হবে। সব বিষয়ে হয়তো লিখতেও পারবো না। সম্মেলনের দুই সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। আশা করি আগামীর জলবায়ু সম্মেলনে দুইদিনের এই কর্মশালা বেশ কাজে দেবে।
এসময় জলবায়ু পরিবর্তনে সাংবাদিকদের প্রস্তুত করতে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় ক্যাপস এবং পিআইবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রোম বলেন, এই প্রশিক্ষণটি সায়েন্টিফিক কমিউনিটি, জার্নালিস্ট, অ্যাকটিভিস্টদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত জ্ঞান আহরণের এবং জ্ঞানের সম্প্রসারণের পাশাপাশি কমিউনিকেশনের ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম হবে।
এসময় অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, উন্নত শহরগুলো যারা বর্তমানে পরিবেশ বিষয়ক নীতি নির্ধারণ করছে ১০০ বছর আগে তারাই দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে ছিলো। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ দূষণগুলোর ফল হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বায়ু দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একই মুদ্রার দুটো পিঠ, স্থানীয় পর্যায়ে বায়ু দূষণ সমস্যার সমাধানসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জলবায়ু সম্মেলনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে পারে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
সভাপতির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, জলবায়ু দূষিত হওয়ার কারণে পরিবেশে যে ভয়ানক প্রভাব পরছে তা অতিদ্রুত রোধ করা জরুরি। এর জন্য একযোগে কাজ করার কথাও তিনি বলেন। তিনি প্রশিক্ষণে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে সফলতার সঙ্গে কপ-২৮ কাভার করার আশা ব্যক্ত করে প্রশিক্ষণ কর্মশালাটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন পরিচালক মির্জা শওকত আলী, দৈনিক জনকণ্ঠের চিফ রিপোর্টার কাওসার রহমান, দ্যা ডেইলি স্টারের চিফ রিপোর্টার মো. আল-মাসুম মোল্লা, একাত্তর টেলিভিশনের রিপোর্টার মো. হাবিবুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ইফতেখার মাহমুদ, সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান সম্রাটসহ আরও অনেকে।
টিআই/জেডএস