শ্রমিকদের আন্দোলনে নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের

গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করতে শ্রমিক, কর্মী ও ট্রেড ইউনিয়নের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে অসমতা দূরীকরণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ। পাশাপাশি শ্রমিকদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের নিপীড়নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
সোমবার (৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ কথা জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, শ্রমিকদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনা বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ কতটা বিরূপ সে বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই আন্দোলনে দুইজন শ্রমিক নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর পরপর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তবে প্রায় প্রতিবারই নিজেদের দাবি আদায়ে শ্রমিকদের রাজপথে নামার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা (৭২ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং সুস্পষ্ট শ্রম বৈষম্য) নির্ধারণের আগমুহূর্তেও পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ বছর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
শ্রমিকদের দাবি করা ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকার বিপরীতে পোশাকশিল্পের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ১০ হাজার ৮০০ টাকা প্রস্তাব করে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি বিজিএমইএ আন্দোলনরত শ্রমিকদের দমিয়ে রাখতে ‘কাজ না করলে মজুরি নেই’ নিয়ম তৈরি করছে, যা নিন্দনীয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ২৩ হাজার টাকার নিচে যেকোনো মজুরি দিয়ে শ্রমিক ও তার পরিবারের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ। সেগুলো হলো:
১. পোশাক শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. বর্তমান ন্যূনতম মজুরি (৮ হাজার টাকা), শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৩৫ শতাংশ। মজুরি ৪৮ ঘণ্টা/প্রতি সপ্তাহে প্রদান করা উচিত এবং এর মাধ্যমে শ্রমিকের পুষ্টিকর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিশু সন্তানের যত্ন, পরিবহন এবং সঞ্চয়সহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারতে হবে।
৩. শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অধিকারভিত্তিক আন্দোলনের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।
৪. যেসব আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনে, তারা স্থানীয় শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মজুরি বৃদ্ধির দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে এবং তাদের এই ন্যায্য দাবি আদায়ে জোরালো সমর্থন জানাবে।
কেএ
