উন্নয়নের নতুন রূপে আফতাবনগরকে বদলে দিতে চান তিনি

মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী। জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি নির্বাচনে ছাতা প্রতীক নিয়ে আলমগীর ঢালী-এস এম কামাল পরিষদ থেকে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। আগামী ২৫ নভেম্বর সোসাইটির চলতি বছরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হলে উন্নয়নের নতুন রূপে জহুরুল ইসলাম সিটি তথা আফতাবনগর এলাকাকে বদলে দিতে এলাকাবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন।
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী শুধু একজন সভাপতি প্রার্থী নন, তার রয়েছে আরও অনেক উল্লেখযোগ্য পরিচয়। তিনি কাজ করছেন আফতাবনগরবাসীর উন্নয়নের জন্য, বসবাসও সেখানেই। তিনি ইউএস বাংলা গ্রুপের পরিচালক, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, নির্ভানা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন ঢালী উচ্চ বিদ্যালয় এবং আফতাবনগরের নবেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
৩৭ জনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হলে শান্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশের এলাকা হিসেবে খ্যাত আফতাবনগরকে উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে দিতে চান এ ব্যবসায়ী। এসব নিয়ে তিনি মুখোমুখি হন ঢাকা পোস্টের এবং জানান নির্বাচন ঘিরে তার কর্মযজ্ঞ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালীর সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত।
ঢাকা পোস্ট : আসন্ন জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি নির্বাচনের জন্য আপনার প্যানেলের প্রার্থীদের কীভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে? নির্বাচিত হলে কীভাবে কাজ করতে চায় আপনাদের প্যানেল?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : এই এলাকার প্রতিটি সেক্টর ও ব্লক থেকে পরিশ্রমী, মেধাবী, কর্মঠ এবং পরোপকারী ব্যক্তিদের নিয়ে আলমগীর ঢালী এস এম কামাল পরিষদ গঠিত হয়েছে। একটি আধুনিক, স্মার্ট, টেকসই, সমৃদ্ধ এবং বাসযোগ্য আফতাবনগর প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে আমরা আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই আফতাবনগরে বসবাস করেন। যাদের মধ্যে অনেক স্বনামধন্য ও প্রথিতযশা শিক্ষক, বিচারপতি, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, ব্যাংকার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।

এলাকাবাসীর কাছে নির্বাচন শুধু একটি ভোট উৎসব নয়, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ, জীবন-জীবিকার নিশ্চিত নিরাপত্তা বিধানকল্পে দায়িত্বশীল, আস্থাবান ও সুযোগ্য প্রতিনিধি বা নেতৃত্ব চূড়ান্তকরণের অগ্নিপরীক্ষা। এ পরীক্ষায় মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী ও এস এম কামাল এবং তাদের প্যানেলের প্রতিটি সদস্য পরীক্ষিত। তারা সকলেই অত্যন্ত সুপরিচিত এবং এই এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী।
আরও পড়ুন
আমরা উপহার দিতে চাই এমন একটি বাসযোগ্য স্থান; যেখানে শিশুরা থাকবে নিরাপদ, তরুণ-তরুণীরা থাকবে কর্মচঞ্চল ও ইতিবাচক, ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল হবে নিরাপদ। আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই টেকসই, সমৃদ্ধ আবাসিক এলাকা, আমরা চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পন্ন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত এবং আধুনিক আফতাবনগর গড়ে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য। রাস্তাঘাট, সড়ক বাতি ও সুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সকলের পরামর্শ নিয়ে একযোগে কাজ করব।
জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি নির্বাচনে আলমগীর ঢালী এস এম কামাল পরিষদের পূর্ণ প্যানেল জয়ী করতে আফতাবনগরবাসীর কাছে ছাতা মার্কায় ভোট চাই। আফতাবনগরকে নাগরিক সুবিধা সম্বলিত একটি উন্নত আবাসিক এলাকা গড়ার সুযোগ চাই আমরা।
ঢাকা পোস্ট : আফতাব নগর এলাকায় নিরপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার কোনো উদ্যোগ আপনার আছে কী না?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : হ্যাঁ অবশ্যই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সামরিক, আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে অধিক সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করার পরিকল্পনা আমার গ্রহণ করেছি। নির্বাচিত হলে আফতাবনগরবাসীর জন্য সার্বক্ষণিক টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও চুরি ছিনতাই রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন
নিরাপদ যোগাযোগ ও গণপরিবহনের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আছে। আমরা আফতাবনগর আবাসিক এলাকার অভ্যন্তরে বসবাসরত সবার চলাচলের জন্য সোসাইটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বল্প খরচে আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : আফতাবনগর এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের অনেকেরই অভিযোগ এখানে সেভাবে কাঁচাবাজারের ব্যবস্থা নেই, এছাড়া স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়েও অনেকের অভিযোগ আছে। এসব বিষয় কি আপনাদের ভাবনায় আছে?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : আফতাবনগরবাসী যেন সহজে বাজার করতে পারেন সে লক্ষ্যে ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃক বরাদ্দকৃত স্থানে দ্রুত কাঁচা বাজার স্থাপন করব আমরা। এছাড়া আফতাবনগরের বড় সমস্যা হলো পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিংসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্যাটি দ্রুত সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
আফতাবনগর একটি নতুন আবাসিক এলাকা যেখানে নামিদামি স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও বাজার না থাকায় প্রতিনিয়ত স্কুলগামী ছেলে-মেয়ে এবং অভিভাবক, অসুস্থ রোগীসহ আফতাবনগরবাসীদের বাঁশের সাঁকো দিয়ে বনশ্রী যাতায়াত করতে হয়। বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং, সিটি কর্পোরেশন ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আফতাবনগর ও বনশ্রীর মধ্যে বেইলি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগের বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে রেখেছি।
ঢাকা পোস্ট : আফতাবনগর এলাকায় মশার উপদ্রব এবং ভেতরের দিকের রাস্তা নিয়ে অনেকই অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : আফতাবনগর আবাসিক এলাকা নির্মাণাধীন এলাকা হওয়ায় সারা দেশের ন্যায় মশার উপদ্রব ও প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত মশক নিধন, ওষুধ ছিটানো ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করব। এছাড়া এলাকার প্রধান সড়কসহ বেশিরভাগ এভিনিউ রাস্তা এবং শাখা রাস্তাসমূহ পিচ ঢালাই না হওয়ায় আফতাবনগরে বসবাসকারী নাগরিকরা চলাচলে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিষয়টি লাঘবের জন্য ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচিত হলে আফতাবনগরবাসীর জন্য বিশেষ কোনো সেবা আপনি দিতে চান?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : আমরা নির্বাচিত হলে আফতাবনগরবাসীর জন্য বিশেষ ধরনের সেবা প্রদান করতে চাই। এর মধ্যে প্রথমেই এই এলাকাবাসীর জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে চাই। যেহেতু আফতাবনগরে নামিদামি কোনো হাসপাতাল নেই, তাই জরুরি প্রয়োজনে কোনো অ্যাম্বুলেন্স এখানে পাওয়া যায় না। এ সমস্যা দূর করার জন্য সোসাইটির তত্ত্বাবধায়নে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করব। এছাড়া ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ প্রতিটি ব্লকে মসজিদের জন্য জায়গার বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং বরাদ্দকৃত জায়গায় দ্রুত সময়ের মধ্যে মসজিদ স্থাপনের ব্যবস্থা নেব। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সহযোগিতায় বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য আফতাবনগরে একটি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান স্থাপন করা হবে।

জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির অভ্যন্তরে অ্যাভিনিউ রোড ও শাখা রোডগুলো পর্যাপ্ত আধুনিক লাইট স্থাপনের মাধ্যমে আলোকিত করার উদ্যোগও আছে। নতুন এলাকা হওয়ায় এখানে এখন পর্যন্ত কোনো নামিদামি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে কারণে এই এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী বনশ্রীসহ দূর-দূরান্তে যেতে হয়। ভবিষ্যতে নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আনা ও প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃক বরাদ্দকৃত সোসাইটির নিজস্ব ভবনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত তথা কমিউনিটি সেন্টার, দাতব্য চিকিৎসালয়, ব্যায়ামাগার, পাঠাগারসহ মাল্টিপারপাস বিল্ডিংয়ের সুব্যবস্থা করা হবে। সোসাইটির নিজস্ব ভবনের পাশে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : আফতাবনগরের অভ্যন্তরে একক থানা প্রতিষ্ঠার জন্য এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে আসছে, এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আপনারা নেবেন?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : আপনি ঠিকই বলেছেন। আফতাবনগর ক্রমবর্ধমান এলাকা যেখানে অতি দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভৌগোলিকভাবে বাড্ডা থানার পরিধি অনেক বড়। বাড্ডা থানার মাধ্যমে এই বৃহৎ এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা কষ্টদায়ক। এ অবস্থায় আফতাবনগর থানা নামে একক থানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করতে চাই, আবেদন জানাতে চাই।
ঢাকা পোস্ট: অন্যদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে আপনাদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করার মতো কী কী পদক্ষেপ রয়েছে?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার, সাধারণ মানুষের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো আলাদাভাবে যুগোপযোগী করে সাজিয়েছি। যেসব বিষয়গুলোর সবগুলোই অন্যদের থেকে আমাদের আলাদা করবে। যেমন, আফতাবনগর এলাকা বা এর আশপাশে কাছাকাছি দূরত্বে কোনো কবরস্থান না থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কবরস্থানের জায়গা বুঝে নিয়ে ব্যবস্থা করতে চাই। এছাড়া জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষাক্ষেত্রে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেওয়ার লক্ষ্যে মেধাবৃত্তি তহবিল গঠন ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ডাটাবেজ তৈরি ও সংরক্ষণ করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন আফতাবনগর এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমগ্র প্রজেক্ট এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনব।
প্রজেক্টে বসবাসরত নাগরিকদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সোসাইটির অধীনে সংশ্লিষ্ট ব্লকে প্রতিটি রাস্তার প্রতিনিধি সমন্বয়ে ব্লক কমিটি গঠন করা হবে। ময়লা-আবর্জনা দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করে আফতাবনগর আবাসিক এলাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখার জোরালো পদক্ষেপ নিতে চাই। সবমিলিয়ে আমাদের প্যানেলের কাজের উদ্যোগগুলোই অন্যান্যদের তুলনায় আমাদের আলাদা করে দেবে।
ঢাকা পোস্ট : মোটা দাগে কী বলবেন আফতাবনগরবাসীর জন্য?
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : আগামী ২৫ নভেম্বর জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি নির্বাচনে আমাদের প্যানেল নির্বাচিত হলে উন্নয়নের নতুন রূপে আফতাবনগরকে বদলে দিতে চাই, সে অনুযায়ী কাজ করতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী : ঢাকা পোস্টকেও ধন্যবাদ।
এএসএস/এমজে
