আমাদের শাস্তি দিয়ে লাভ কী?

‘সংসারে আমিসহ পাঁচজন। দিন কামাই, দিন খাই। গত এক ৮-১০ দিন ইনকাম নাই। গ্যারেজ তেজগাঁও। সকালে বের হইছি। লোকজন নেই, ক্ষ্যাপও কম। একটা ক্ষ্যাপ নিয়ে দৈনিক বাংলা আইছি। ওখান থেকে ঘুরতে ঘুরতে এখানে আসলাম।’
‘এখানে পুলিশ ধরে রিকশা উল্টা করে রেখেছে। এক ঘণ্টার শাস্তি। কী করবো বলেন? আমরা তো শখে বের হই নাই। আমাদের শাস্তি দিয়ে লাভ কী? আমাদের ব্যাংক ব্যালেন্স নাই। ঘরে খাবারও মজুদ নাই। গাড়ি না চালাইলে চলব কেমনে, খামু কী? আমাদের খাবার দেবে কে? এখন পুলিশ ছাড়লে গ্যারেজে গিয়ে রিকশা জমা দিতে হবে। কিন্তু ইনকাম হইছে ১০০ টাকা। ৫০ টাকা জমা দিলে থাকব ৫০ টাকা। পাঁচ জনের খাবার কেমনে চলবে? লকডাউনে আমরা কী করব?’
রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে কথাগুলো বলছিলেন আয়েশ আলী নামের এক রিকশাচালক। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের সাত দিনের বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রিকশা নিয়ে বের হওয়ায় এ চালককে শাস্তি দিয়েছে পুলিশ। শাস্তি হিসেবে রিকশা উল্টো করে রেখে দেওয়া হয়েছে। এক ঘণ্টা এভাবে থাকবে। শুধু আয়েশ আলীই নন, তার মতো অনেকের রিকশা উল্টো করে রাখতে দেখা গেছে।
রিকশা উল্টো করে রাখায় বসে আছেন আরেক চালক মুনসুর বেপারী। ষাটোর্ধ্ব এ রিকশাচালক বলেন, ‘বয়স হইছে বলে কেউ কাজে নেয় না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা চালাই। মানিকনগর থেকে মতিঝিল যাত্রী নিয়ে আসলাম। নামিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ রিকশা ধরছে। আধা ঘণ্টা হইছে। কথা বললে শাস্তি বাড়ে। তাই চুপ করে বসে আছি। লকডাউনে রিকশা চালাইতে দিব না। কী করবো? সংসার চলবে কেমনে? খাবার দেন, ঘরে বসে থাকি। তা তো দিব না। গরীবের যত সমস্যা। বলে লাভ কী?’
রিকশা আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল শাপলা চত্বরে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সবুজ ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘লকডাউনে চলাচল নিষিদ্ধ। তাই রিকশা যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট বসিয়ে রেখে আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। যাতে বের কম হয়। সকালে অনেক রিকশা বের হয়েছিল। আটক করার কারণে এখন কিছুটা কমে এসেছে।’
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ঘোষিত সাত দিনের বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে ১৪ এপ্রিল, চলবে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। এ বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়েছেন। অনেক চেকপোস্টেই রিকশা আটকে দিতে দেখা গেছে।
এসআই/আরএইচ