আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না : এমপি বাহার

কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন, আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না। বিএনপি-জামায়াতের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার বক্তব্য আবেগ থেকে বলেছেন বলেও দাবি তার।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়, প্রকাশ্যে এমন কথা বলার পর আপনাকে নির্বাচন কমিশন থেকে শোকজ করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের হাত-পা গুঁড়া করে দেবেন বলেছেন। একজন প্রার্থী হিসেবে আপনি এমন কথা বলতে পারেন কি না? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে এমপি বাহার বলেন, যেদিন আমি বক্তৃতা করি, তার ঠিক আগের দিন একজন রিকশাওয়ালা মারা গেছেন। পত্রিকায় আমি এভাবে পেয়েছিলাম, একজন রিকশাওয়ালা তার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তিনি সেদিন একটি গ্যারেজে ঘুমিয়েছিলেন। সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কারণ তারা (বিএনপি) নির্বাচন প্রতিহত করতে চান। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দুদিন হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন নারী ও একটি শিশু মারা গেছে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিষয়ে বলেছিলাম। তারা তো প্রতিহতের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ২০১৪ সালে তারা চার থেকে পাঁচশত ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যাতে ওই কাজগুলো তারা না করতে পারে, সে জন্য মানসিক জোর বাড়াতে এমন কথা বলেছি।
আপনি কী এমন কথা বলতে পারেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল। যদি নির্বাচনের আচরণের ভেতরে না পড়তাম, তাহলে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু আমি এতো বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হয়েছে কীসের রাজনীতি আমরা করি, মানুষ হত্যার রাজনীতি করি? আমরা তো প্রোগ্রাম করি, আমরা তো মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না।
এমপি বাহার বলেন, আমি তো বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি একটি থানা দখল করেছিলাম। ৫২টি মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তখনই উপলব্ধি করতাম, কখন দেশ স্বাধীন হবে, আর আমাদের মেয়েরা নিরাপত্তা পাবে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের মেয়েরা নিরাপদ না। ট্রেনে উঠলে সেই ট্রেনের বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়, শিশুসহ মারা যান। এসব কারণেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।
তিনি বলেন, যদি আবেগ না করত, তাহলে এই কথা আমি বলতাম না। অন্য সময় এটা বলা যেত, কারণ তাহলে নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে পড়তো না।
আপনার আসনে একজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ৭১ টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি নিরপেক্ষ না থেকে আমার বিপক্ষে খণ্ডিত নিউজ দিচ্ছে। আমি তাকে বলেছিলাম, দয়া করে আমার নিউজ দেওয়া লাগবে না আপনার। এটা কি বলা অপরাধ হয়ে গেছে? খণ্ডিত নিউজ দিয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, এটা বলার অধিকার আমার নেই?
একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে আপনাকে। বারবার আচরণবিধি কেন লঙ্ঘন করেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না। আমাকে যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই চিঠি আচরণবিধিতে চলে না। আমাকে কী সাজা দেওয়া হবে, সেটা জানতে এসেছিলাম। সেই ব্যাখ্যা জানতে এসেছিলাম। কারণ আমি তো আইনজীবী না।
এতদিন যা বলেছেন, তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না? এমন প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ওই একটা জায়গায় হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এসে যদি আবার ভোটকেন্দ্র দখল করে। আগুন লাগাতে চায়, তাদের ধরবেন, ভেঙে দেবেন। এটা আমার আবেগ থেকে বলা।
গত ১৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এলাকায় একটি উঠান বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, যদি কোনো বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায় তার হাত ও ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। পরে ‘আমি আ.ক.ম বাহাউদ্দিন আপনাদের সাথে আছি’— মর্মে উসকানিমূলক নির্দেশনা সম্বলিত বক্তব্য নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনে ভিডিও ফুটেজসহ সংবাদ প্রচারিত হলে তা অনুসন্ধান কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়।
আরও পড়ুন
পরবর্তী সময়ে ওই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক কুমিল্লা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ অনুসন্ধান কমিটির কাঠেছ পাঠান। নৌকা মার্কার প্রার্থীর এই বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হয়েছে মর্মে অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রতীয়মান হওয়ায় কমিটি তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এসএইচআর/এসএম