আগুনে মাদার টেক্সটাইলের উৎপাদন বন্ধ, রঙ্গিন সুতার দাম বাড়ার শঙ্কা

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে গাজীপুর শ্রীপুরের মাদার টেক্সটাইলের বড় একটি অংশ। আগুনে কারখানাটির পাঁচটি ইউনিটের তিনটিতেই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক।
টেক্সটাইল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদার টেক্সটাইল দেশীয় বাজারে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুতার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আগুনের কারণে তাদের সুতা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। এমনিতেই পুরনো এই কারখানাটি নানামুখী সংকটে বিপর্যস্ত। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটল।
করোনা সংকটেও কারখানাটি শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করে আসছিল। সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কোনো সুযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও তারা যথারীতি ব্যাংকের কিস্তি ও তিতাস গ্যাসের সব বকেয়া পরিশোধ করে সুতার নিয়মিত মান বজায় রেখেছিল।

সম্প্রতি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার ১০০ টনের একটা অর্ডার পেয়েছিল মাদার টেক্সটাইল। কিন্তু আগুন লাগার পর থেকে জুট প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রঙিন সুতা তৈরি করা এই কারখানাটি এখন বন্ধ।
মাদার টেক্সটাইলে মূলত ২০ ধরনের রঙিন সুতা তৈরি হয়। এগুলো দেশীয় বাজারে সুতার ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে থাকে। এখন কারখানাটি বন্ধের কারণে বাজারে রঙিন সুতার দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, আগে কালার ভেদে বাজারে পাউন্ড প্রতি রঙিন সুতার দাম ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু করোনার কারণে মাদার টেক্সটাইল বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় সুতার প্রতি পাউন্ডে ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছিল।
টেক্সটাইলটির পরিচালক (অপারেশন) মো. হানিফ বলেন, মাদার টেক্সটাইল দেশের অন্যতম বৃহৎ রফতানিযোগ্য সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি দৈনিক ১০০ টন সুতা উৎপাদন করতে পারে। এই কারখানায় ৬ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। বর্তমানে কারখানাটি বন্ধ আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটি চালু করা সম্ভব না।
তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে সরকারের প্রণোদনা না পাওয়া সত্ত্বেও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা, বকেয়া গ্যাস বিল এবং ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। যার কারণে অর্থের অভাবে বিমা করা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে মাদার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এলিজা সুলতান বলেন, অগ্নিকাণ্ডে বয়লার, ডায়িং, কার্ডিং মেশিনসহ অনেক মালামাল পুড়ে গেছে। কারখানার ৫টি ইউনিটের মধ্যে তিনটিই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো। এমনিতেই নানামুখী সংকটে আমরা বিপর্যস্ত। এখন সরকারের সুদৃষ্টি পেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারব। কারখানাটির সঙ্গে প্রায় ৬ হাজার মানুষ জড়িত। তাদের জন্য হলেও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাই।
তিনি বলেন, মাদার টেক্সটাইল বাজারে রিসাইকেল রঙ্গিন সুতার সবচেয়ে বড় অংশ সরবরাহ করে। আমরা উৎপাদনে না আসতে পারলে বাজারে এসব সুতার দাম এমনিতেই বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, মাদার টেক্সটাইল দেশীয় বাজারে মোট সুতার বড় অংশ সরবরাহ করে থাকে, এটি সত্য। কিন্তু সেখানে অগ্নিকাণ্ডের কারণে এখনই বাজারে বড় প্রভাব পড়বে কি-না, তা বলা যাচ্ছে না। লকডাউনের বাজারে সুতার চাহিদা কী পরিমাণ আছে, আগে তা দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ছবিতে মাদার টেক্সটাইলের আগুনের যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে সহসাই মেশিনারিজ রিপ্লেস করা সহজ হবে না। কারণ করোনার কারণে অনেক কিছুই আমদানি করা কঠিন হয়ে গেছে।
এসআর/এমএইচএস