‘মাঞ্জা’ দেওয়া ঘুড়ির সুতা কাটাকাটিতে জমেছে সাকরাইন

আজ পৌষসংক্রান্তি। নানা আয়োজনে পুরান ঢাকায় উদযাপন করা হচ্ছে সাকরাইন উৎসব। বরাবরের মতো ঐতিহ্য ধরে রেখে ‘মাঞ্জা’ দেওয়া ঘুড়ির সুতায় একজন আরেকজনের ঘুড়ি কাটাকাটিতে আনন্দে খুঁজে নিচ্ছেন এখানকার স্থানীয়রা।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, সাকরাইনকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার লক্ষ্মী বাজার এলাকার অধিকাংশ বাসা বাড়ির ছাদগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ঘুড়ি উড়িয়ে, আতশবাজি ফাটিয়ে ও গান বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন তারা। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে সার্বজনীন ঢাকার উৎসবের রূপ নিয়েছে সাকরাইন।
আরও পড়ুন
রিয়াসাত নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা সাকরাইনকে ঘিরে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস করি। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো, বাড়ির ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আগুন নিয়ে খেলা, সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো এই উৎসবের অংশ। সবচেয়ে মজা হচ্ছে মাঞ্জা দেওয়া ঘুড়ির সুতা কাটাকাটিতে। যে বেশি ঘুড়ির সুতা কাটতে পারে সেই সাকরাইনের রাজা।

সাকরাইন উৎসবের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, ‘সাকরাইন’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সংক্ৰাণ থেকে এসেছে। যার আভিধানিক অর্থ হলো ‘বিশেষ মুহূর্ত’। অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হয়
সাকরাইন। এই সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক দেশেই এই উৎসব পালন করে। তবে ভিন্ন ভিন্ন নামে। বাংলায় দিনটি পৌষ সংক্রান্তি এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত।
ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়, ১৭৪০ সালের এই দিনে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেই থেকে এই দিনটি কেন্দ্র করে বর্তমানে এটি একটি অন্যতম উৎসব ও আমেজের পরিণত হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ না রেখে সকলে এই উৎসব পালন করে থাকেন। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করেন পুরান ঢাকাইয়ারা।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, নবাবপুর, শ্যামবাজার, ধূপখোলা, শাখারী বাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মী বাজার, ফরাশগঞ্জ, সদরঘাট, গেন্ডারিয়া, নারিন্দা, লালবাগ, চকবাজার, মুরগিটোলা ও ধোলাইখাল এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে সাকরাইনের আমেজ।
এসব এলাকার দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রং-বেরঙের ঘড়ি। এসব ঘুড়িরও রয়েছে বাহারি সব নাম। চোখদার, রকদার, গরুদার, ভোমাদার, কাউঠাদার, ফিতালেঞ্জা, একরঙা, চানতারা, সাপঘুড়ি, প্রচাপতি, প্যাঁচা ও বাক্সসহ নানান নামের ঘুড়ি পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে।
উল্লেখ্য, সাকরাইন উৎসব শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। প্রায় সারা রাত ব্যাপী চলে নানা আয়োজন। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সময় থাকে বিকেল ও সন্ধ্যায়।
আরএইচটি/কেএ