১২ দফা দাবিতে ইনসাবের ‘দাবি দিবস’ পালিত

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করে মৌলিক অধিকারসহ ১২ দফা দাবিতে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) পালন করেছে ‘নির্মাণ শ্রমিকদের দাবি দিবস’।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) এ উপলক্ষ্যে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও র্যালির আয়োজন করে সংগঠনটি।
মানববন্ধনে ইনসাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, নির্মাণ শিল্পে প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন। বিদেশেও কর্মরত আছেন কয়েক লাখ নির্মাণ শ্রমিক। নির্মাণ শ্রমিকদের এ কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, কর্মস্থলে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কর্মস্থলে শ্রমিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের দেখভাল করারও কেউ নেই।
ইনসাবের ১২ দফা দাবি হলো
১. সরকারি উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা শহরে থানা ও ওয়ার্ডভিত্তিক এবং সারাদেশে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক নির্মাণ কলোনি স্থাপন করে সুলভ মূল্যে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেওয়ার মাধ্যমে নির্মাণ শ্রমিকদের বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে। কলোনিতে শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল এবং চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সভা প্রতিমাসে একবার করতে হবে। তহবিল থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং সাহায্যের আবেদন ফরমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. শ্রম আইনের আওতায় নির্মাণ শ্রমিকদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রেশনিং ব্যবস্থা, দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহত বা আজীবন পঙ্গুত্ব বরণকারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী এক জীবনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণের ভিত্তিতে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন শ্রমিকদেরকে ১৫ লাখ টাকার কম ক্ষতিপূরণ যাতে না দিতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৪. নির্মাণ শ্রমিকরা তাদের অধিকার বাস্তবায়নে যাতে সহজে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে সে লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা/উপজেলায় শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে এবং অধিকার ও পাওনাদির বিষয়ে ৪২ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৫. ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ এবং নির্মাণ শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. শ্রম আইন সংশোধনী ২০০৬ এর ৩২৩ ধারা অনুযায়ী জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য কাউন্সিলে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশে (ইনসাব) প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৭. কর্মস্থলে নির্মাণ শ্রমিকরা যাতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে শুধু সার্ভিস চার্জ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে বিদেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বর্তমানে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের হয়রানি ও দুর্ভোগ বন্ধ করতে হবে।
৯. সরকারি উদ্যোগে বিভাগীয় শহরে থানা ভিত্তিক এবং জেলা ও উপজেলায় শ্রম ছাউনি নির্মাণ করতে হবে।
১০. নারী নির্মাণ শ্রমিকদের সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
১১. নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য রেজিস্ট্রার খাতা রাখার বিধান সব নির্মাণাধীন ভবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।
১২. নির্মাণ শ্রমিকদের সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করতে হবে।
ইনসাবের সভাপতি মো. রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানসহ ইনসাবের কেন্দ্রীয়, বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ডের নেতারা।
ওএফএ/জেডএস