চাঁদপুরের নৌবন্দরে পৌঁছেছে মেট্রোরেলের বগি

জাপান থেকে মেট্রোরেলের বগির প্রথম চালান আগামী ২৩ এপ্রিল ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ির জেটিতে পৌঁছাবে। প্রথম চালানে মেট্রোরেলের বগি আছে ছয়টি। গত ৩১ মার্চ মোংলায় পৌঁছে বগিগুলো। সেখানে খালাসের পর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথে বগিগুলোর পরিবহন শুরু হয়।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন হিসেবে যাত্রীবাহী নৌপরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে বগিগুলো বহনকারী বার্জ ধীরে ধীরে এগিয়ে আনা হয় ঢাকার দিকে। সোমবার বগিগুলো চাঁদপুরের নৌবন্দরে পৌঁছায়। ঢাকা পোস্টের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার বিকেলে চাঁদপুরের মতলবের মোহনপুর নৌবন্দরে বার্জটি পৌঁছায়। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ডিএমটিসিএলের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সোমবার বিকেলে ঢাকা পোস্টকে জানান, বগিগুলো মোংলা থেকে বার্জে শুধু দিনের বেলা পরিবহন করা হচ্ছে। বগিগুলো চাঁদপুরের নদীবন্দরে ভিড়েছে। আমরা উত্তরার দিয়াবাড়িতে জেটি তৈরি করেছি। সেখানে বগিগুলো আমাদের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ২৩ এপ্রিল আসবে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে, মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের আগে বগিগুলোর বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
• প্রতিটি ট্রেন যাত্রী বহন করতে পারবে ১ হাজার ৭৩৮ জন
• প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬২ শতাংশ
• উত্তরা তৃতীয় পর্ব-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৩.৫২ শতাংশ
গত ৪ মার্চ জাপানের কোবে বন্দর থেকে এমভি এসপিএম ব্যাংকক নামের একটি জাহাজযোগে এসব বগি পরিবহন শুরু হয়। গত ২৪ মার্চ পায়রা বন্দরে এটি পৌঁছে। ছয়টি বগি নিয়ে পায়রা বন্দর থেকে জাহাজটি গত ৩০ মার্চ মোংলা বন্দরে পৌঁছে। ৩১ মার্চ এগুলো জাহাজ থেকে খালাস করা হয়। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়াশেষে নদীপথে বগিগুলোর পরিবহন শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ঢাকার উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথ স্থাপনের কাজ সবমিলে এগিয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিনে ও রাতে প্রকল্প এলাকায় কাজ চলছে। বিশেষ করে মিরপুর, আগারগাঁও অংশে কাজ অব্যাহত রাখতে রাস্তার বিভিন্ন অংশ বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যেও সীমিত ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। এসব গাড়ি বিকল্প পথে চলাচল করছে। উড়োজাহাজ মোড়ের পাশঘেঁষে আগারগাঁও যাবার পথে প্রতিবন্ধক দিয়ে আলাদা লেন করা হয়েছে গাড়ি চলাচলের জন্য। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে থেকে যে সংযোগ সড়ক আগারগাঁওয়ের দিকে গেছে সে পথ দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে আগারগাঁও অংশ ব্যবহার করতে পারছেন না চলাচলকারী গাড়ির চালকরা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬১.৪৯ শতাংশ। তারপরও কাজ এগিয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৩.৫২ শতাংশ। এই অংশে বর্তমানে মেট্রোস্টেশন নির্মাণ ও ভায়াডাক্টের ওপর রেলপথ বসানোর কাজ চলছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক নিয়মিত বিরতিতে, কখনও আকস্মিকভাবে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আকস্মিকভাবে গত ১ এপ্রিল মধ্যরাতে এমআরটি লাইন-৬ এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ পরিদর্শন করেন তিনি। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চাই। এজন্য প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সবমিলে এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি হাইকায়া ইউহো সম্প্রতি ইআরডি সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতে নিয়োজিত জনবলের মধ্যে দ্রুত করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।
জানা গেছে, প্রকল্পের দিয়াবাড়ি ও গাবতলীতে দুটো মাঠ-হাসপাতাল সবসময় প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। জরুরি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালগুলোতে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ২৪ সেট ট্রেন তৈরি করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি। প্রতি সেট ট্রেনের দুপাশে দুটি ইঞ্জিন থাকবে। এর মধ্যে থাকবে চারটি করে কোচ। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোতে থাকবে লম্বালম্বি আসন। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুপাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানি স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংবলিত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে এক হাজার ৭৩৮ জন।
পিএসডি/এমএআর/