চোর-পুলিশ খেলায় শাটার ওঠানামায় চলছে বিক্রি

বুধবার (২১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টা। রাজধানীর গ্রিন রোডের মূল সড়কের বেশিরভাগ দোকানের সামনে মানুষের জটলা। কমবেশি প্রত্যেকের চোখ কাউকে পাহারা দিচ্ছে। তবে খালিচোখে সেটা বোঝার উপায় নেই। কিছু সময় অপেক্ষা করতেই স্পষ্ট হয়, আসলে এরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলাফেরা নজরে রাখছেন।
মূলত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে এসব দোকানে বিকিকিনির কাজ চলছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু দোকানদারদের অনেকেই অর্ধেক শাটার খুলে, কেউবা শাটার না খুলেই কৌশলে বিক্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীর গ্রিন রোড ছাড়াও কলাবাগান, পান্থপথ ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক দোকানেই বিক্রি চলছে। এসব দোকানের ভেতরে একজনকে রেখে সামনে দোকানি ও কর্মচারীরা ঘোরাফেরা করেন। কোনো ক্রেতা এলে তারা দ্রুত শাটার খুলে মালামাল বিক্রি করে আবার বন্ধ করে দেন।
এসব এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিধিনিষেধের শুরুর দিকে জরিমানার ভয়ে কোনো দোকান খোলা হয়নি। তবে পরবর্তীতে কৌশলে জরিমানা বা পুলিশের জেরার মুখে পড়তে না হয় সেজন্য দোকানগুলোর সামনে সতর্ক পাহারা বসিয়ে বিক্রির কাজ শুরু করে দোকানদাররা।
গ্রিন রোডের একটি সেনেটারির দোকান থেকে এক ক্রেতাকে মালামাল কিনে বের হতে দেখা যায়। সেখানে কথা হলে ক্রিসেন্ট রোডের এই বাসিন্দা জানান, বাসার বাথরুমের জন্য কিছু সেনেটারি মালামাল জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন হওয়ায় তিনি এই পরিস্থিতিতে কেনাকাটা করেছেন। দোকানের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দ্বিতীয় দিন থেকে পুলিশকে পাহারা দিয়ে দোকান চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে বিক্রির পরিমাণ খুব কম।

একই সড়কে কয়েকটি দোকানের সামনে আলমাস ইলেকট্রিক স্টোরের সামনে কথা হয় ম্যানেজার নূর-উজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দোকানে ৬ জন কর্মচারী। দোকানের ভাড়া আর কর্মচারীর বেতন না দিয়েতো উপায় নেই। তাই মালিকসহ কয়েকজন কর্মচারী পাহারা দিয়ে টুকটাক বিক্রি করছি।’
নূর-উজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার সময় পুলিশের গাড়ি আসতেই দেখা যায়, অর্ধেক শাটার খোলা রাখা দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশি গাড়ি পাহারা দিয়ে যাওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে আবার দোকানের শাটারের কিছুটা অংশ খুলে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করে বিক্রেতারা।
চলমান লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও অন্যান্য দোকান ও শপিংমল পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকার গত ৫ এপ্রিল সাতদিনের জন্য গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন বিধিনেষেধ জারি করে। পরে তা আরও দুইদিন বাড়ানোর পর গত ১৪ এপ্রিল থেকে আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে সরকারি বিধিনিষেধ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) থেকে নতুন করে আরও সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তবে বিধিনিষেধের সময় বাড়ালেও কিছু শর্ত শিথিল হতে পারে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে সরকার দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে।
এনআই/এইচকে