সময়ের সঙ্গে বাড়ছে গাড়ির চাপ

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে সরকার ঘোষিত ‘সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ’র আজ অষ্টম দিন চলছে। প্রতিদিনের মতোই মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ও সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে রাস্তায় অবস্থান করছে পুলিশ। নিয়ন্ত্রণ করছে যানবাহন।
তাদের ভাষ্য, দিন যত গড়াচ্ছে রাস্তায় গাড়ির চাপও তত বাড়ছে। অন্যদিকে, ব্যাপকহারে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন। তাদের থামাতে জরিমানাও করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো।
বুধবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর রোড এবং গাবতলী পুলিশ চেকপোস্ট দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ব্যাপক সংখ্যক গাড়ি এই চেকপোস্ট দিয়ে পার হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে প্রাইভেটকার। এসব গাড়িগুলো থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করছে পুলিশ। এর পাশাপাশি রয়েছে মোটরসাইকেল এবং পণ্যবোঝাই ট্রাক। এছাড়া রাজধানীর সড়কগুলোতে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং বাইসাইকেলও ছিল চোখে পড়ার মতো।
গাবতলী চেকপোস্টে থাকা রাজধানীর দারুসসালাম থানার উপ-পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, যতগুলো গাড়ি এই পথ দিয়ে যাচ্ছে আমরা প্রত্যেকে চেষ্টা করছি জিজ্ঞেস করতে। কারণ অনেকে ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে। সেখান থেকে আমরা দেখেছি, কারও মুভমেন্ট পাস আছে, কেউ রফতানি পণ্যের কাজে বাইরে যাচ্ছে, কেউ ওষুধ কোম্পানির কাজে, আবার কেউবা গার্মেন্টসের কাজে। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগই বলছে সাভার থেকে সর্বোচ্চ আশুলিয়া পর্যন্ত যাবে। আসলে সত্যিকারার্থে তারা কতদূর যাবে, এটা বুঝা মুশকিল। তারা শুধুমাত্র কাছে বলেই, চেকপোস্টগুলো পার হচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে, গাড়ির চাপ তত বাড়ছে। তবে কোনো গণপরিবহন চলছে না। নিজস্ব পরিবহনগুলো নিজস্ব প্রয়োজনে চলছে।

ওই চেকপোস্টে থাকা মিরপুর জোনের সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১০টি সিএনজি এবং একটি প্রাইভেটকারকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। সিএনজিগুলো মূলত গণপরিবহনের আওতায় পড়ে, তাই এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর সঠিক কারণ দেখাতে না পারায় একটি প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোটরসাইকেল চালকরাও সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখাতে পারেনি। এছাড়া তাদের সঙ্গে বাইকের লাইসেন্স, হেলমেট এবং মুভমেন্ট পাস পাওয়া যায়নি।
জব্দ হওয়া মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে মিন্টু নামের একজন বলেন, গাবতলী বাস স্ট্যান্ডের পেছনে আমার বাসা। আমি টাকা আনতে চাচার কাছে আমিনবাজার যাচ্ছি। পথিমধ্যে তারা আমাকে আটকে দিয়েছে।
এদিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। সেখানে ব্যক্তিগত সিএনজিতে তিন জন গাদাগাদি করে যাওয়ায় তিন সিএনজি চালককে জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই মোটরসাইকেলে দুজন, বিভিন্ন গাড়িতে গাদাগাদি করে লোক এবং সরকারের আদেশ অমান্য করে কোনো যানবাহন চলাচল করছে কি-না সে বিষয়গুলো তদারকি করতেই এখানে এই আদালত বসিয়েছে বিআরটিএ।
বিআরটিএ-এর ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত-৯) তাসলিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত তিন জন সিএনজি চালককে জরিমানা করতে পেরেছি। বাকিদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছে, সেটি বিবেচনা করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, সবাই জরুরি কাজে যাচ্ছে। সাধারণ অজুহাত দেওয়া অনেককেই বাসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেকের শারীরিক ভাষা দেখেই বোঝা যায়, তারা কতটা জরুরি কাজে যাচ্ছে। সেই হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিন জন যাত্রী নিয়ে জরিমানার শিকার হওয়া সিএনজি চালক আবদুল গফুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের এই জরিমানাকে এখন আমরা অসহায় হিসেবেই মেনে নিচ্ছি। আমাদের কিছু করার নেই। পেটের দায়ে গাড়ি চালাচ্ছি, এখন বসে থাকাও তো সম্ভব না। মিরপুর-১ থেকে তিন জন যাত্রী নিয়ে মতিঝিল যাচ্ছিলাম। তাদেরকে এখানে নামিয়ে দিল, তাদের কাছ থেকে তো ভাড়াও পেলাম না। মাঝখান থেকে উল্টো ২০০ টাকা জরিমানা দিতে হলো।
এমএইচএন/এফআর