বিধিনিষেধেও স্বরূপে রাজধানী

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। দ্বিতীয় দফার বিধিনিষেধেও একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীতে। দিন যতই যাচ্ছে রাস্তায় বাড়ছে মানুষের উপস্থিতি।
বিধিনিষেধ চলাকালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের না হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। যদিও অধিকাংশ মানুষ তা মানছেন না। নানা অজুহাতে রাস্তায় বের হচ্ছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জরিমানা করেও ঘরে রাখতে পারছে না নগরবাসীকে। এতে যে উদ্দেশ্যে এ বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে তার সুফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে বিধিনিষেধ চলাকালেও চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। রাস্তায় বের হওয়া অধিকাংশ মানুষই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। অনেকে মাস্ক পরলেও তা নামিয়ে রেখেছেন থুতনির নিচে।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর প্রগতি সরণি থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
রাস্তায় বের হওয়া লোকজন জানান, তাদের পক্ষে ঘরে বসে থাকা আর সম্ভব নয়। যারা বের হয়েছেন তারা সবাই নিজেকে স্বল্প আয়ের মানুষ দাবি করছেন। তারা বলছেন, এত দিন ঘরে বসে থাকলে তো না খেয়েই মরে যেতে হবে। তাই বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় বের হয়েছেন কাজের সন্ধানে।
উত্তর বাড্ডা মোড়ে খেলনার দোকান নিয়ে বসা আজম আলী বলেন, এত দিন তো বাসায় ছিলাম। কেউ তো আমাদের সাহায্য করেনি। কেউ তো আমাদের কাছে ত্রাণ নিয়ে আসেনি। আমরা অল্প আয়ের মানুষ, বেশি দিন ঘরে বসে খাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া সামনে ঈদ আসছে, এখন কিছু টাকা আয় না করলে পরিবার নিয়ে কীভাবে ঈদ উদযাপন করব?

তবে অর্থসংকটে বাধ্য হয়ে অনেকে ঘর থেকে বের হলেও ঘোরাঘুরি ও আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া লোকজনের সংখ্যাও কম নয়।
রামপুরা ব্রিজ থেকে সিএনজি অটোরিকশা করে আজিমপুর বোনের বাসায় যাবেন সানজিদা খাতুন। বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন বোনের বাসায় যাওয়া হয়নি। এখন তো অনেক মানুষ রাস্তায় যাতায়াত করে আর পুলিশও তেমন কিছু বলে না। তাই এ ফাঁকে বোনের বাসা থেকে ঘুরে আসব বলে বের হয়েছি। আমি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘর থেকে বের হয়েছি।’
এছাড়া প্রথম দফার বিধিনিষেধের মতো দ্বিতীয় দফায়ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে চলছে আড্ডা। রাস্তার পাশে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে চলছে গল্পগুজব।
এদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর অস্থায়ী পুলিশ চেকপোস্টেও দেখা গেছে ঢিলেঢালা ভাব। প্রথম দফার বিধিনিষেধের মতো আর কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না পুলিশ চেকপোস্টগুলো। এছাড়া বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমও কমে গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক মানুষ জরুরি কাজে ঠিকই বের হয়েছে। যারা আগে থেকে জরুরি কাজে বের হবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন তারা মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হচ্ছেন। আর যারা হুট করে জরুরি কাজে বের হয়ে গেছেন তারা মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হতে পারেননি। তবে তারা উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারছেন। কিন্তু আরেক দল যারা জরুরি কাজের বাহানা করে বের হলেও আসলেই তাদের কোনো জরুরি কাজ নেই। এসব লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাদের চেকপোস্টে আটকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। এমনকি জরিমানা করে বাসায়ও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমএসি/এসকেডি/জেএস