করোনার চেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা বেশি

করোনার চেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা বেশি। করোনায় মরলে আমি একা মরব, আর খেতে না পারলে আমার পুরো পরিবার মারা যাবে। এজন্য নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে পরিবারকে বাঁচাতে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) মিরপুর-২ নম্বরে রিকশাচালক মতিন ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন। নওগাঁর বদলগাছি থেকে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকায় এসে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন মতিন।
মতিন বলেন, আমার পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকে। সংসারে আমার মা, স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। রিকশা চালিয়ে টাকা পাঠালে তারা খেতে পারেন। নইলে সংসার চলে না। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে গ্রাম ছেড়েছি। গত এক বছরে ঋণ অনেকটা পরিশোধও করেছি।
তিনি বলেন, বাড়িতে একটা এনজিওর থেকে কিছু ঋণ নেওয়া আছে। সপ্তাহ ঘুরলেই কিস্তির টাকা দিতে হয়। যদিও লকডাউনের পর থেকে কিস্তি নেওয়া বন্ধ আছে। কিস্তি বন্ধ থাকার এই কয়দিন যদি রিকশা চালাতে পারি তাহলে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারব। আমার ওপর থেকে চাপ কমবে।
তিনি আরও জানান, ‘লকডাউনের প্রথম কয়েকদিন পুলিশ ঝামেলা করছিল। কিন্তু এখন কম ঝামেলা করে। পুলিশকে বুঝিয়ে বললে ছেড়ে দেয়। তাছাড়া কয়েকদিন আগেও একটু পরপর পুলিশের চেকপোস্ট ছিল। ফলে ঝামেলা বেশি হতো। কিন্তু এখন চেকপোস্ট অনেক কমেছে। এজন্য রিকশা চালাতে সেভাবে সমস্যা হয় না।
সুলতান নামের দায়িত্বরত এক পুলিশ বলেন, আগে বেঁচে থাকতে হবে। শুরুতে আমরা খুব কঠোর ছিলাম, এখনও আছি। কিন্তু ওদের দিকেও তাকাতে হবে। একটু সুযোগ না দিলে ওরা না খেয়ে মরে যাবে।
এর আগে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা বাস্তবায়নে গত ৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া রাস্তাঘাটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশনা ছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় দিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ এপ্রিল থেকে সকাল সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে। তবে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
পরবর্তী সময়ে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ১১ এপ্রিল শেষ হলেও এই মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ ও ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন পালন করা হচ্ছে। সর্বাত্মক লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
এসআর/ওএফ