ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়ার বিষয়ে দেওয়া যাবে মতামত

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন বাড়ি-ঘর তৈরি, উন্নয়নমূলক কাজ, শিল্পকারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং প্রাকৃতিক কারণে প্রতিনিয়ত ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণিগত ব্যবহারের পরিবর্তন হচ্ছে। আবার দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ও জলাশয় বিনষ্ট হয়ে খাদ্য শস্য উৎপাদনের নিমিত্ত কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এ ধরনের জরুরি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ আইনের খসড়াটি জনসাধারণ এবং অংশীজনের মতামতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। ই-মেইল কিংবা পত্রের মাধ্যমে মতামত জানানো যাবে।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, এ আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, আবাসন, বাড়ি-ঘর তৈরি, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, শিল্পকারখানা ও রাস্তাঘাট নির্মাণরোধ করা; ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রেখে পরিবেশ রক্ষা ও খাদ্য শস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা; কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড়, নদী, খালবিল ও জলাশয় সুরক্ষাসহ ভূমির পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা; এবং ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিকল্পিত জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন
এতে জানানো হয়, এ আইনের মূল বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ভূসংস্থান এবং উদ্দিষ্ট ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে জমিকে স্বতন্ত্র অঞ্চলে নিখুঁতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থল মূল্যায়নের মাধ্যমে, সরকার ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি করছে, যা সারা দেশে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য একটি স্পষ্ট প্রতিচিত্র প্রদান করবে। ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলমান প্রকল্পটির নাম ‘মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প’।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার মূলভিত্তি কৃষিজমির সুরক্ষার বিষয়টি আইনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলেও জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ আইনে উর্বর জমির অননুমোদিত ব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাতে টেকসই খাদ্য ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়। জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে জলাভূমি, বন ও নদী ব্যবস্থার মতো পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলগুলো সংরক্ষণের জন্য বিশেষ বিধানগুলোর রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
এতে জানানো হয়, আইনের খসড়ায় ভূমি জোনিংয়ের জন্য ১০টি শ্রেণিবিন্যাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে– আবাদি, আবাসিক, বাণিজ্যিক, জলাভূমি, নদী, বন, পাহাড়, রাস্তা, শিল্প ও ধর্মীয় স্থান।
এ আইনে নির্ধারিত ভূমি ব্যবহার বিধি লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। দণ্ডের মধ্যে জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত রয়েছে, যা শ্রেণি বহির্ভূতভাবে ভূমির অবৈধ ব্যবহার এবং অবৈধ ভূমি দখল রোধে সরকারের অঙ্গীকার। এ আইনের অধীনে অনধিক দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এসএইচআর/এসএসএইচ