আশপাশে ছিল আরও কারখানা, আগুন ছড়িয়ে পড়লে পরিণতি হতো ভয়াবহ
রাজধানীর চকবাজারের নামাপাড়া হাজী বাবুল রোডের ১১৫/১২/৫১ বিল্ডিং। ভবনটি চারতলা। শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
শনিবার (২৩ মার্চ) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির আশপাশে রয়েছে পুরোনো কয়েকটি ভবন। এসব ভবনে রয়েছে নানা কারখানা।
ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে দিয়েই গেছে বৈদ্যুতিক তার। দুই পাশে অন্তত চারটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার দেখা গেছে। চারদিকে এমন জঞ্জালপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়লে পরিণতি ভয়াবহ হতো বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
লালবাগ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মো. মুস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে আশপাশে অসংখ্য লাগোয়া ভবন ও বাড়ি আছে। যদি এই আগুন ছড়িয়ে পড়ত তাহলে ভয়াবহ একটি অবস্থা তৈরি হতো। এখানে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার রয়েছে। এটি যদি বিস্ফোরণ হতো তাহলে ভয়ানক অবস্থা হতো।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় এসব বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করে আসছি। মানুষকে সতর্ক করার জন্য মহাপরিচালকের নির্দেশক্রমে সব ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। আগুন নির্বাপণ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কেউ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
লালবাগ ফায়ার স্টেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আগুন নির্বাপণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই মুহূর্তে আর কোনো ঝুঁকি নেই। ভবনটিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এটি একটি কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক রিসাইকেল প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন প্লাস্টিক কণা ও কেমিক্যাল দ্রব্য স্তূপ করা ছিল। যার কারণে আমাদের এখানে প্রবেশ করতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে ভেতরের আগুন কমিয়ে ধোঁয়া বের করেছি। পরে ভেতরে প্রবেশ করেছি। আগুন যেন আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে বিষয়ে আমাদের শুরু থেকেই প্রচেষ্টা ছিল, আমরা সফল হয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। কোনো হতাহতের খবর আমরা পাইনি।
কী কারণে এমন আগুনের ঘটনা– জানতে চাইলে মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে আগুনের সূত্রপাত তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না। তবে এখানকার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে স্টক আকারে কেমিক্যাল ও অন্য দ্রব্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এরপর আবার আমাদের পানি ও রাস্তার সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
জানতে চাইলে কারখানার ম্যানেজার মো. আশিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি রাত ৩টা ২০ মিনিটে খবর পাই কারখানায় আগুন লেগেছে। সাড়ে ৩টার দিকে ছুটে এসেছি। আমি যখন আসি, তখন দেখলাম ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও আসছে।
তিনি বলেন, এটি গরুর ফার্মের সিড তৈরির কারখানা। এটি বন্ধ ছিল। গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাত ৮টা পর্যন্ত চালানোর পর কারখানা বন্ধ ছিল। আজ সকালে কারখানা খোলার কথা ছিল।
ম্যানেজার বলেন, আমাদের আইটেমগুলো স্লো যাচ্ছে, সেজন্য বন্ধ ছিল। আমরা স্টাফদের ছুটি দিয়েছিলাম। মোট ৮০ জনের মতো স্টাফ আছে এ কারখানার।
ঠিক কী কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে তা জানেন না মো. আশিক। তবে তার ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আগুনে এক কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও এসময় দাবি করেন কারখানার ম্যানেজার।
প্রত্যক্ষদর্শী আজাদ মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুন লেগেছিল এই কারখানার দ্বিতীয় তলায়। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন দ্রুত আসে। রাত হওয়ায় রাস্তা খালি ছিল, এজন্য তারাও দ্রুত আসতে পেরেছে। আগুনও দ্রুত নেভানো গেছে। দ্রুত নেভানো না গেলে হয়ত আগুন আরও ছড়িয়ে যেত।
এসএইচআর/এসএসএইচ