ঈদ বাজার ধরতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা

১১ দিন বন্ধ থাকার পর সারাদেশে আজ খুলেছে দোকানপাট ও শপিংমলসহ সব ধরনের মার্কেট। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ৭ ঘণ্টা কেনাকাটার জন্য মার্কেট খোলা থাকবে। রোববার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর সায়েন্সল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্স, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকাসহ আশপাশের কয়েকটি মার্কেট ঘুরে সকাল থেকেই দোকান খোলার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের।
তারা বলছেন, গত ১৪ এপ্রিল (বুধবার) থেকে শনিবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত ১১ দিন মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ থাকায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। মূলত পহেলা বৈশাখ, রোজা, ঈদ ও পূজাকে ঘিরে ব্যবসা হলেও টানা দুই বছর মূল উৎসবের আগে পরে মার্কেট বন্ধ থাকায় বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ব্যবসায়িক ক্ষতির চিন্তায় প্রতি মুহূর্তেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে তাদের।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালিত না হওয়ায় এবং বিনিয়োগ করা মূলধন যথাসময়ে লভ্যাংশসহ ফেরত না আসায় ঋণের বোঝা ও কিস্তির চাপে এখন দিশেহারা অনেকেই। গত বছরও মার্কেট ও দোকান বন্ধ থাকায় পহেলা বৈশাখে ঘিরে বেচাকেনা হয়নি। আর এ বছর পহেলা বৈশাখ ঘিরে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদের বাজার ধরতে ব্যবসায়ীরা ধরতে মরিয়া হয়ে আছেন। যেকোনো মূল্যে পূর্বের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঈদে জমজমাট বেচাকেনা প্রত্যাশা করছেন তারা।

চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্সের রাইসা ফ্যাশন হাউসের ম্যানেজার বোরহান উদ্দিন বলেন, আমাদের ব্যবসার ৪০-৫০ শতাংশ পহেলা বৈশাখ ও ঈদ ঘিরে হয়। আমরা টানা দুই বছর পহেলা বৈশাখের বেচাকেনায় লস (ক্ষতি) করেছি। আর এবারের ঈদের বাজারেরও অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। তারপরও যে সময় রয়েছে আমরা প্রত্যাশা করছি ভালো বিক্রি হবে এবং আমাদের আর্থিক ক্ষতিও কিছুটা ঘুচে যাবে।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের প্রিয়ামণি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাইসুল ইসলাম বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমাদের যে প্রস্তুতি ছিল সেগুলোর অধিকাংশই অবিক্রিত থাকায় ইতোমধ্যেই গোডাউন খালি করে আবার ঈদ উপলক্ষে শাড়ি এবং থ্রি পিস মজুদ করেছি। পাইকারি এবং খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।

তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মার্কেটের কর্মচারীদের দোকানে আসতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান গাউছিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী স্বপন চৌধুরী। তিনি বলেন, এমনিতেই দোকান বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। তার ওপর গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে মার্কেটে আসাও যাচ্ছে না। যারা দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন, বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে রিকশায় মার্কেটে আসতে হচ্ছে। তাই অচিরেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর দাবি জানাচ্ছি।
অপরদিকে সকালে মার্কেট ও দোকান খোলার পর থেকে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাতে বসেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা। সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শুরু করেন নীলক্ষেত পর্যন্ত শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, থ্রি পিস, গহনা, বিছানার চাদর, ছোট বাচ্চাদের কাপড় নিয়ে বসতে দেখা যায় তাদের।

ভাসমান ব্যবসায়ীরা জানান, বিধিনিষেধের কারণে অনেকদিন দোকান খুলতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। প্রশান্ত চৌহান নামের এক দোকানি বলেন, আমাদের আর কোনো আয়-উপার্জন নেই। ফুটপাতে বসে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। এতদিন দোকান খুলতে না পারায় মহাজনের ঋণের টাকা বাকি পড়েছে। এখন ঈদ উপলক্ষে যদি বেচা-বিক্রি যদি কিছুটা হয় তাহলে হয়ত ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আর না হয় খুব বিপদে পড়তে হবে।
ঈদ মৌসুমে বেচাকেনা করতে এবং করোনার বিধিনিষেধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবারও দোকান ও মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদনিচক বিজনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনেই মার্কেটের কার্যক্রম চলবে। আর ঈদ উপলক্ষে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবারও আমরা মার্কেট খোলা রাখব।
আরএইচটি/এসএসএইচ