ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ-ক্ষমতা তিনশ গুণ বেশি

করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত মারাত্মক, যা বাংলাদেশে এলে দেশের অবস্থা ভারতের মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির লাইন ডিরেক্টর মোহাম্মদ রোবেদ আমিন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পাশের দেশ ভারতে যে ভ্যারিয়েন্ট চলে এসেছে তা অত্যন্ত মারাত্মক। এটির চারদিকে সংক্রমণ ছড়ানোর তিনশ গুণ বেশি ক্ষমতা রয়েছে। আমরা যদি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন না করি, তাহলে আমাদের চিত্র পার্শ্ববর্তী দেশের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে যেতে পারে।
রোবেদ আমিন বলেন, ভারতের ভ্যারিয়েন্ট যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বারবার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। কোয়ারেন্টাইন অবশ্যই ১৪ দিন হতে হবে। এর কমে কোয়ারেন্টাইন সম্ভব নয়। কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয়, এতে আরও অনেক মন্ত্রণালয়-অধিদফতরের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা যদি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জিনিসটি দেখতে চাই, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন হলে সবচেয়ে ভালো হয়। যদি তা না-ও হয়, যদি কেউ বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকেন তাহলেও ১৪ দিন কঠোরভাবে থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনই একমাত্র পথ নয়। ভ্যাকসিন একটি মাত্র পথ। পৃথিবীতে যতগুলো প্রমাণিত বিষয় আছে তার একটি হলো সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে অনেক প্রমাণ এসেছে।
টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে টিকা পেতে ছয়টি দেশের সমন্বয়ে একটি ইমার্জেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি টু সাউথ এশিয়া ফোরামে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রীতি ও ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে চীন সরকার বাংলাদেশকে ছয় লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা উপহার দেবে বলেছে। এখন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিচ্ছি। এখনও কিছু টিকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট তাদের বাধাগত কারণে এখন পর্যন্ত আমাদের টিকাগুলো দিতে পারছে না। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে বলেছে, অন্তত ২০ লাখ টিকা যেন শিগগির আনার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া রাশিয়ার ভ্যাকসিন এ দেশে প্রস্তুত করার জন্য সরকার আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে এখনও ফাঁকা রয়েছে ৩২০ বেশি আইসিইউ বেড; শূন্য আছে অনেক সাধারণ শয্যা। এই প্রসঙ্গে রোবেদ আমিন বলেন, কোভিড চিকিৎসার জন্য আইসিইউ বেড বাড়ানো হয়েছে, সারাদেশ যদি আমরা চিন্তা করে তাহলে আমাদের আইসিইউ বেড ১ হাজার ৬৮টি। বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসা নিচ্ছে ৭৪৬ জন। ৩২০টি আইসিইউ বেড আমাদের এখনও খালি রয়েছে। ৭৪৬ জন যে রোগী ভর্তি রয়েছে এরা সবাই গুরুতর। এ বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
দেশে করোনার সবশেষ চিত্র
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৫৩ জনের। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯২২ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩২২ জনে।
টিআই/জেডএস