ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন
আসন্ন ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটি পেতে যাচ্ছেন দেশবাসী। সংগত কারণে চাপ বাড়বে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। ঈদকে টার্গেট করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এ লক্ষ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ১২টি, পতেঙ্গায় ১২টি ও কক্সবাজারে ২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যামেরা পর্যবেক্ষণে পল্টনে ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম।
পাশাপাশি কক্সবাজারের প্রতিটি বিচকে ইন্টারকমিং সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে। এর ফলে পর্যটকরা তাদের সমস্যা সরাসরি ইন্টারকমের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশকে অবগত করতে পারবে। সৈকতে নির্দিষ্ট স্থানে সুইচ থাকবে। বিপদগ্রস্ত বা সমস্যাগ্রস্ত কোনো পর্যটক চাইলে সেই সুইচ চাপ দিলে নিকটস্থ ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত হবেন।
রোববার (৩১ মার্চ) বিকেলে পল্টনে প্রধান কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজি (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু কালাম সিদ্দিক।
তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট যা পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে। পর্যটন শিল্প বিকাশে অন্যতম প্রধান শর্ত এ শিল্পের নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা ঘোষণা করেন। সেই নীতিমালার ৬.৯ অনুচ্ছেদে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েনের বিষয় উল্লেখ করেন। পরে ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ট্যুরিস্ট পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠনের মাধ্যমে পর্যটন খাতের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য মতে জিডিপিতে ট্যুরিজমের অবদান ২০১৩ সালে ছিল ২.৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪.৪%। এ সাফল্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ অন্যতম অংশীদার।
আসন্ন ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ১০ বা ১১ এপ্রিল। সে হিসেবে ১০ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের ছুটি, ১৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক বন্ধ এবং ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি থাকবে। দীর্ঘ এই ছুটিতে পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম আশা করা যাচ্ছে।
এই সময়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ১২টি, পতেঙ্গা বিচে ১২টি ও কক্সবাজারে ২০টি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ সাজেক ভ্যালিতে এবারই প্রথম ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। সেন্ট্রাল সিসি টিভি মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম থেকে কক্সবাজার সৈকতের সব কার্যক্রম মনিটর করা যাবে। এবং বাংলাদেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকার ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম মনিটর করা হবে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের প্রতিটি সৈতককে ইন্টারকমিং সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে। এর ফলে পর্যটকরা তাদের সমস্যা সরাসরি ইন্টারকমের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশকে অবগত করতে পারবেন।
কক্সবাজারের প্রতিটি সৈকত এলাকায় সিকিউরিটি অ্যালার্মিং বাটন লাগানো হচ্ছে, এর ফলে কোনো পর্যটক কোনো সমস্যায় নিমজ্জিত হলে বাটন টিপ দিলে সে বাটন ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে আওয়াজ তৈরি করবে এবং পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ওই বাটন এলাকায় হাজির হবে।
প্রতিটি সৈকতে দেওয়া হচ্ছে ফ্রি মোবাইল ফোন সিস্টেম যেখান থেকে পর্যটক সরাসরি কোনো ট্যুরিস্ট পুলিশ তথা সেন্টারে হোয়াটসঅ্যাপ এবং কল করতে পারবেন। এছাড়াও সম্প্রতি ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ঘোড়ার গাড়ি ও ময়ূরপঙ্খি সৈকতে বাইকের মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টহল ডিউটি দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সকল পর্যটন স্পটে স্বল্প সংখ্যক ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের দিয়ে নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব নয় বলে ট্যুরিস্ট পুলিশ সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশ হেল্পলাইন নম্বর ০১৩২০-২২২২২২ এবং ০১৮৮৭-৮৭৮৭৮৭ এর মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা পর্যটকদের সেবা প্রদান করা হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ ফেসবুক পেজ Tourist Police Bangladesh, ট্যুরিস্ট পুলিশ ওয়েবসাইট www.touristpolice.portal.gov.bd, Hello Tourist Apps, ও ইউটিউব চ্যানেল Tourist Police Bangladesh এর মাধ্যমে পর্যটকদের সেবার মান ও ট্যুরিস্ট পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশকে পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ গন্তব্যে পরিণত করা ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় ট্যুরিস্ট পুলিশের ঢাকা, গাজীপুর ইউনিটের প্রধান, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় ১০৪টি ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা অনলাইনে অংশ নেন।
জেইউ/জেডএস