৩ দিনে একাই করেছে ১০ মোবাইল চুরি, হাতেনাতে আটক তরুণ

তোমার বয়স কত? সোজা উত্তর ৯। এভাবে কয়েকবার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করা হয়। একেকবার একেকরকম বলতে থাকে সে। একপর্যায়ে জানায় তার আসল বয়স ১৯। এভাবে বয়স লুকানোর কারণ জানতে চাইলে সে বলে, সঠিক বয়স বললে তাকে পাঠানো হবে কারাগারে। এ কারণে কৌশলে বয়স কমিয়ে বলা। বয়স কম হলে পাঠানো হয় কিশোর সংশোধনাগারে।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে এক বালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন এই প্রতিবেদক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আগের দিন অর্থাৎ রোববার রাতে তাকে চকবাজার এলাকা থেকে মোবাইল চুরির অভিযোগে হাতেনাতে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম আবুল কালাম ওরফে নয়ন বলে জানায়। উচ্চতায় ৩ ফুটের কাছাকাছি ওই তরুণকে দেখলে মনে হবে মানসিকভাবে অনেকটা অসুস্থ। কিন্তু বাস্তবে তার কথা শুনলে যে মনে হবে না তার এ ধরনের কোনো সমস্যা আছে।
ওসির কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন জানায়, নগরের পাঁচলাইশ থানার ২ নম্বর গেট এলাকায় সে সবচেয়ে বেশি মোবাইল চুরি করে। মাদকাসক্ত তারেক নামে এক বসের নির্দেশে সে মোবাইল চুরি করে থাকে। প্রতিটি মোবাইলের জন্য সে পায় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। গঠনে ছোট হওয়ার পরও কেমনে মোবাইল চুরি করে সেই প্রশ্ন রাখতেই- তার সোজা উত্তর, বেশিরভাগ সময়ে সে নারীদের টার্গেট করে।
সম্প্রতি মোবাইল কোথায় চুরি করেছে জানতে চাইলে আটক নয়ন জানায়, গত বৃহস্পতিবার নগরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে সে দুটি মোবাইল চুরি করেছে। এর পরদিন (শুক্রবার) একই এলাকা থেকে ৩টি এবং শনিবারও সে ৫টি মোবাইল চুরি করে। এভাবে ৩দিনে মোট ১০টি মোবাইল চুরি করে নয়ন।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক বালক জানায়, তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নে। পিতা-মাতা দুজনেই অসুস্থ। আরও ছোট অবস্থায় সে চলে আসে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় চলে আসে। সেখানে ভিক্ষা করে সে জীবনযাপন করত। কয়েক বছর আগে সে নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় এক বড় ভাইয়ের খপ্পরে পড়ে চুরির কাজে নেমে পড়ে। প্রথমে একজনে চুরি করে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে সে চুরিতে নেমে পড়ে। প্রতিটি মোবাইল চুরির পর সে তার বসকে জমা দিয়ে দেয়। এর বিনিময়ে নামমাত্র টাকা পায় সে।
চুরিবিদ্যায় হাত পাকানো ওই বালককে নিয়ে বিস্ময় যেন কাটছে না চকবাজার থানা ওসি ওয়ালী উদ্দিনের আকবরেরও। একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন ওই বালককে।
ওসি ওয়ালী উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২ নম্বর এলাকা থেকে রোববার রাতে সে মোবাইল চুরি করতে চকবাজার থানা এলাকায় চলে আসে। মোবাইল চুরির সময় তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং একই সঙ্গে তার দেওয়া বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
হাসপাতাল ঘিরেও সক্রিয় চোরচক্র, টার্গেট রোগীর স্বজনরা
সোমবার দুপুরে চকবাজার থানার ওসির কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর ডিউটি অফিসারের কক্ষে দেখা যায় এক নারীকে। রেহেনা আক্তার নামে ওই নারী থানায় এসেছেন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে করতে। থানার জিইসি মোড় এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মোবাইল চুরি হয়েছে। ওই হাসপাতালে ষষ্ঠ তলার হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) তার বাবার চিকিৎসা চলছে। রোববার দিবাগত রাতে হাসপাতালের করিডোরে হালকা চোখে ঘুমে এসেছিল তার। এই ফাঁকে মোবাইল চুরি করে চম্পট দিয়েছে কেউ। এ কারণে থানায় জিডি করতে এসেছেন।
ভুক্তভোগী রেহেনা আক্তার বলেন, আমার মোবাইল খোলা আছে। কল দিলেই কথা হচ্ছে। মোবাইলের ওই প্রান্ত থেকে জানানো হচ্ছে তিনি মোবাইল কিনে নিয়েছেন। আমি জিডি করেছি। পুলিশের লোকজনও চেষ্টা করছেন।
এদিকে, পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ঘিরে হঠাৎ সক্রিয় হয়েছে চোর চক্র। তারা দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীর স্বজনরা হারাচ্ছেন মোবাইল টাকা-পয়সাসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মচারীরও এতে যোগসাজশ থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশ কর্মকর্তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মোবাইল ও মালামাল হারিয়ে স্বজনরা থানায় আসছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে আসেন। নানা সময় মোবাইল চুরির অভিযোগে লোকজন চোরদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করছেন।
এমআর/এমএ