বন্ধুকে খুন, একাই জানাজা পড়ে লাশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ট্রাকচালক আজিজুল হককে হত্যা ও মরদেহ গুমের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন হত্যা মামলার আসামি মো. নেজাম।
রোববার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নিজ স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সন্দেহ থেকেই বন্ধু আজিজুলকে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যার কথা স্বীকার করেন নেজাম। আদালত ও পুলিশের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান সার্কেল মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘ এক মাসের তদন্ত শেষে প্রায় কোনো ক্লু না থাকা আজিজুল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি।
সেই মোতাবেক শনিবার (২৪ এপ্রিল) ঘটনার মূল হোতা নেজামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার দিবাগত রাতে ভিকটিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে রোববার (২৫ মার্চ) আসামি নেজামকে আদালতে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা বের করার জন্য তদন্ত অব্যাহত আছে। আসামি নেজাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা হাজীপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের আল আমিন পাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের পুত্র ট্রাকচালক আজিজুল হক (২৭) নিখোঁজ হন।
২৬ মার্চ ভিকটিমের বাবা রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় জিডি করলে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ভিকটিমের মামা হায়দার আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে নিশ্চিত হয় যে, আজিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি কক্সবাজারে ব্যবহার হচ্ছে। ঘটনার ১৫ দিন পর কক্সবাজার সদর এলাকা থেকে মোবাইল এবং রামু এলাকা থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। অপহরণকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ১৯ এপ্রিল ওই এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা হত্যাকাণ্ডের পেছনে নেজামের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। এরপর পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে নেজামের অবস্থান সন্দ্বীপে শনাক্ত করে। শনিবার (২৪ এপ্রিল) সন্দ্বীপ থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়ার পর হত্যার কথা স্বীকার করলেও হত্যার পদ্ধতি এবং মরদেহের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে থাকেন নেজাম। প্রথমে তিনি দাবি করেন যে, আজিজুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এবং তার মরদেহ কর্ণফুলী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণের মুখে শেষ পর্যন্ত নিজে খুন করার কথা এবং মরদেহের সঠিক অবস্থান জানাতে বাধ্য হন নেজাম।
পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, নেজামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ের পাদদেশে একটি ডোবা থেকে শনিবার দিবাগত রাতে আজিজুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ মার্চ বালু আনার নাম করে আজিজুলকে কৌশলে রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়া এলাকার এক নিভৃত জায়গায় নিয়ে যান নেজাম। এরপর ট্রাকের রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন আজিজুলকে। বন্ধুকে হত্যার পর একাই পড়েন জানাজা, ক্ষমা চান মরদেহের হাত ধরে।
পুলিশ জানিয়েছে, আজিজুলকে হত্যার পর একদিন পাহাড়ে মরদেহ লুকিয়ে রাখেন নেজাম। এরপর বন্ধু আজিজুলের জানাজা ও দাফন করার চিন্তা আসে নেজামের মাথায়। সে অনুযায়ী ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে নেজাম লাশটিকে কাঁধে করে রাঙ্গুনিয়া থানার চৌধুরী খিলস্থ নাজিম প্রফেসরের পাহাড়ের পাদদেশে একটি ডোবার সামনে নিয়ে আসেন। সেখানে নেজাম একাই আজিজুলের জানাজা পড়েন। পরে কবর দেওয়ার মতো করে ডোবার তলদেশে লাশটিকে গুম করেন। এর আগে হত্যা করার জন্য বন্ধুর হাত ধরে ক্ষমা চান নেজাম।
কেএম/আরএইচ