৭১ টিভির সাংবাদিককে মারধর-ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১৮ জন আটক
রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এলাকায় ৭১ টিভির সাংবাদিককে মারধর ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও থানা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ও হাতিরঝিল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
বুধবার (১০ এপ্রিল) দিনব্যাপী রাজধানীর হাতিরঝিল, তেজগাঁও রেলক্রসিং ও কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
বুধবার রাতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রুবায়েত জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে ৭১ টিভির সাংবাদিকে মারধর ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিনতাইকারীসহ ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আজ দিনভর রাজধানীর হাতিরঝিল, তেজগাঁও রেলক্রসিং ও কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। গতকালের ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এলাকায় ৭১ টিভির গাড়ি টার্গেট করে হামলা করে ৭-৮ জনের সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল।
লুট করে নেয় নগদ টাকা, মোবাইল, ঈদ উপলক্ষ্যে পরিবারের কেনাকাটার পোশাকসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। বাধা দেওয়ায় ও ক্যামেরায় ছবি তোলার চেষ্টা করায় রেললাইন থেকে পাথর নিক্ষেপ করে ছিনতাইকারীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭১ টেলিভিশনের গাড়ি। পাথরের আঘাতে আহত হন রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ, ঘটনাস্থল উল্লেখ করে ঘটনার বিবরণ দিয়ে থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও তিন থানার কোনো থানা দায় নিতে চায়নি। ঘটনাস্থলে তেজগাঁও থানা পুলিশের মোবাইল টহল দল ঘুরে গেলেও দায় নেয়নি। অন্য থানার অধীনে বলে চলে যায়।
ছিনতাই ও ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার রাত সোয়া দুইটার দিকে ৭১ টিভির গাড়ি বারিধারা অফিস থেকে দুজন ভিডিও এডিরটকে ধানমন্ডি নামিয়ে দিতে যাচ্ছিল। রাত আড়াইটার পরপর কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়ালে ৭১ টিভির গাড়ির চালক মাহবুবের গলায় খুর ঠেকিয়ে তার মানিব্যাগ নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে হামলা করে ছিনতাইকারীরা।
তিনি বলেন, আমি নাইট ডিউটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে ক্যামেরাম্যানসহ ঘটনাস্থলে যাই। এসময় ছিনতাইকারীরা সংঘবদ্ধভাবে ইট পাথর নিক্ষেপ করে। ক্যামেরাম্যান খোরশেদ আলমকে জিম্মি করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় উপর্যুপরি কিল ঘুষি মেরে তাকে যখম করে।
তিনি আরও বলেন, হামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের সহযোগিতার জন্য গেলে গাড়িতে থাকা টাকা ও ঈদের জন্য সদ্য কেনা পোশাক ছিনতাইকারীরা লুট করে নিয়ে যায়।
এরপর ঘটনাস্থলে তিন থানার পুলিশ এসে একে অন্যের এলাকা বলে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায় তিন থানার পুলিশ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ইশতিয়াক ইমন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে তেজগাঁও থানা পুলিশ আসে। তারা এসে জানায় এটা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এলাকার অধীনে। আর শিল্পাঞ্চল থানা বলছে এটা হাতিরঝিলে পড়েছে। আর হাতিরঝিল বলছে এটা তাদের এলাকা নয়।
ভুক্তভোগী ৭১ টিভির গাড়ী চালক মাহবুব বলেন, এখন প্রশ্ন বিচার পেতে কোথায় যাব?
সেহরির পর ভোর ৫টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক, তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মোহসীন, হাতিরঝিলের ওসি শাহ মো. আওলাদ হোসেন ফোন রিসিভ করেননি।
তবে মুঠোফোনে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি এবি এম মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলের বিবরণ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানা এলাকা হচ্ছে হাতিরঝিল। এফডিসির উল্টো পাশটা হাতিরঝিলে পড়েছে। ওই এলাকাটা তিন থানার মধ্যে পড়েছে। রেললাইনের একপাশ তেজগাঁও, আরেকপাশ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। আর এফডিসির উল্টো পাশের অংশটা পড়েছে হাতিরঝিলে। ঘটনা সেখানেই ঘটেছে।
এমএসি/এমএসএ