চাঁদার দাবিতে ঢামেকের ক্যান্টিন ভাঙচুর করলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী
![চাঁদার দাবিতে ঢামেকের ক্যান্টিন ভাঙচুর করলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2024April/dmc1-20240412195048.jpg)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলায় ‘একতা স্ন্যাকস অ্যান্ড স্যুপ কর্নার’ নামে এক ক্যান্টিনে চাঁদার দাবিতে জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি মদ্যপান করে ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন হাসপাতালের পুরাতন ভবনের তৃতীয় তলায় চক্ষু বিভাগে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কর্মরত।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতালের আনসার সদস্য, কর্মচারীদের নেতা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
ক্যান্টিনের মালিক দেলোয়ার অভিযোগ করে বলেন, জসিম নামে ঢাকা মেডিকেলের এক স্টাফ ঈদের তিন-চারদিন আগে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। আমি তার কথায় কর্ণপাত না করলে ঈদের দিন সে বেশ কয়েকবার আমাকে ফোন দেয়। আমি ফোন রিসিভ না করলে ঈদের দিন রাত ১১টার দিকে জসিম মদ্যপান করে আমার ক্যান্টিনে আসে। পরে ক্যান্টিনে থাকা রোগীদের লিকুইড খাবার রাখার হটপট, চেয়ার-টেবিল ও শোকেসের গ্লাস ভাঙচুর করেন। এতে ক্যান্টিনে রোগীদের জন্য রাখা তরল খাবারসহ বেশ কিছু ফাস্টফুড নষ্ট হয়ে যায়। এসময় তাকে মদ্যপানের উন্মাদনা থেকে বিরত করতে চাইলে ঢামেক ভবন-২ এর জমাদ্দার জাহাঙ্গীরের উপরে গরম সুপ ফেলে দেয় সে। এতে জমাদ্দার জাহাঙ্গীরের পায়ে ফোসকা পড়ে গেলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এসময় জসিম অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগাল করে। পরে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা তাকে প্রশাসনিক ব্লকে ধরে নিয়ে যায়। আমি ঘটনাস্থলের ভাঙচুরের ভিডিও ফুটেজসহ বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়েছি। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে ক্যান্টিন ভাড়া নিয়েছি। কিন্তু ক্যান্টিনে থাকা জিনিসপত্র সরকারি। তিনি একজন সরকারি স্টাফ হয়ে মদ্যপান করে হাসপাতালের সম্পদ এভাবে ভাঙচুর করতে পারেন না। পরে খবর পেয়ে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির সভাপতি রমিজ উদ্দিন ও শাহবাগ থানা থেকে পুলিশের একটি টিম আসে।
আরও পড়ুন
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2024April/jashim-20240412192417.jpg)
আহত জমাদ্দার জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উপরে খাবার দিয়ে পাশে দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন দেখি অনেক লোকজন। হঠাৎ গরম স্যুপ এসে আমার পায়ের উপরে পড়ে। পরে আমি ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা করাই। জানতে পারি জসিম নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী ক্যান্টিন থেকে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় সেখানে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির (বাচসকস) সভাপতি মো. রমিজ জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং জানতে পারি জসিম নামে এক সরকারি স্টাফ ক্যান্টিনের মালিক দেলোয়ারের কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এর আগে সে এখান থেকে জোর করে ১০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে যায়। আরও ২০ হাজার টাকার জন্য সে চাপ দিতে থাকে। এই টাকা না দেওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে ক্যান্টিন ভাঙচুর করে। পরে আমরা বিষয়টি পরিচালক ও থানা পুলিশকে জানাই।
অভিযুক্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী জসিম উদ্দিন জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে হাসপাতালের মালিক দেলোয়ার ৫০০ টাকা দিতে চেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় আমি ক্ষিপ্ত হয়ে তার ক্যান্টিন ভাঙচুর করেছি। ঈদ উপলক্ষ্যে আমি ৫০০ টাকা চেয়েছি, এটা নিয়ে সে অনেক ঘুরিয়েছে। যার কারণে আমার জিদ আমি মিটিয়েছি। কী হবে, এই ঘটনায় সর্বোচ্চ আমি সাসপেন্ড হব। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা এসব উল্টাপাল্টা করছে, তাদের আমি দেখে নেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পরে আমরা অভিযুক্ত জসিম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং সে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকার করে। পরে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির সভাপতি রমিজ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে অভিযোগ দেবেন বলে জানান। যেহেতু তিনি একজন সরকারি কর্মচারী, তাই অভিযোগ পেলে আমরা পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
এসএএ/এসএসএইচ