নতুন বছরেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে চায় সরকার

করোনার ধাক্কা সামলে জোরেশোরেই ঘুরছে দেশের অর্থনীতির চাকা। আর এ ধারা অব্যাহত রাখতে চায় সরকার। পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে চায় সরকার।
২০২০ সালে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে মহামারিতেও রেমিট্যান্স এসেছে যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এর আগে এক বছরে বাংলাদেশে এত রেমিট্যান্স আর কখনও আসেনি।
নতুন বছরে সরকারের প্রত্যাশা নিয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, আমি সবসময়ই ভালো প্রত্যাশা করি। আগামী বছরও ভালো যাবে বলে আশাবাদী।
নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিদায়ী বছরে ভালো করেছে বাংলাদেশ। নতুন বছরটি কেমন যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে বলেছে, গত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অন্তত চার শতাংশ কমেছে। এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। এর তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। নানা সীমাবদ্ধতার পরেও করোনা পরিস্থিতি শক্তভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা রয়েছে। অনেক সূচকই স্বস্তিদায়ক অবস্থানে; সবক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে। বেশির ভাগ দেশে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হলেও ইতিবাচক অবস্থানে বাংলাদেশ।
অর্থনীতির এ ধারা অব্যাহত রাখা ছাড়াও মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্য সরকারের। এরমধ্য্যে ২০২১ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল শুরু করতে চায় সরকার। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১৬ ডিসেম্বরেই মেট্রোরেলের একাংশ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যানটি স্থাপনের মাধ্যমে স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়। পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলছে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। তবে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল শুরু করতে চায়।
অন্যদিকে, চলতি বছর চালু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে মেট্রোরেলের অবয়ব। নতুন বছরের শেষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই ঢাকাবাসী মেট্রো রেলে চড়তে পারবেন বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে।
২০২১ সালে আরেক আশা- করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন। আর এ ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে গত বছরের শুরু থেকেই কাজ করছে সরকার। বছরের শুরুর দিকেই দেশে ভ্যাকসিন এসে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ভ্যাকসিনের আগমণ ও প্রয়োগ আগের বছরের ভোগান্তি কিছুটা কমাবে, সেই প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হচ্ছে সম্ভাবনার বছরটি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন আনতে গত ৫ নভেম্বর সরকার চুক্তি করছিল। যুক্তরাজ্য সরকার সেই অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদন দিয়েছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য সুখবর। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন হওয়া মাত্রই সেটি ভারতের পাশাপাশি আমরাও পেয়ে যাব।
সবমিলিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এ প্রত্যাশা বাস্তবায়নে নতুন বছরেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় সরকারের।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মাথায় নিয়েই নতুন বছরে কাজ করবো। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবো বলে আশা করছি।
এসএইচআর/টিএম
