করোনার মধ্যেই সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনে তোড়জোড়!

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য সংশোধিত আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়া শুরু করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। যা চলবে আগামী ১৩ মে পর্যন্ত।
সংশোধিত আইনের খসড়া যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা চূড়ান্ত হলে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলসহ কমে যাবে বিভিন্ন শাস্তি। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর এই আইনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যমান আইনে শাস্তি ও জরিমানা এতো বেশি যে পরিবহন শ্রমিকরা জুলুমের শিকার হচ্ছেন। তাই অনেক আগেই আমরা এই আইনের বিভিন্ন অংশ সংশোধনের দাবি করেছি। কিন্তু কোনো চাপ তৈরি করিনি।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম অবশ্য গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এই সংশোধিত আইন চূড়ান্ত করতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা লাগবে। আবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একাধিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে জানান, আইন সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু জুনের আগে এটি চূড়ান্ত না-ও হতে পারে। লকডাউন পরিস্থিতির কারণে এটি বিলম্বিত হতে পারে। কিন্তু সংশোধন চূড়ান্ত করতে পরিবহন নেতাদের একটি বড় অংশেরও চাপ রয়েছে।
২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহনের বিদ্যমান এই আইনটি কার্যকরের ঘোষণা থাকলেও এটি পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। যার বড় কারণ সড়ক পরিবহন নেতাদের চাপ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত খসড়া আইনে কন্ডাক্টরের পাশাপাশি ‘সুপারভাইজার’ পদ ও ‘হেলপার কাম ক্লিনার’ এবং ‘বন্দোবস্তকারী’ নামেও পদ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিধান রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত তিন চাকা বিশিষ্ট মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে না থাকলেও পণ্যবাহী মোটরযানের নিবন্ধন সনদে উল্লেখিত আসন সংখ্যার বেশি কোনো ব্যক্তি বহন করা যাবে না বলে অংশ রাখার প্রস্তাব রয়েছে। সাধারণত ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হয়। কিন্তু সংশোধিত খসড়ায় জরিমানা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত, প্রদান বা নবায়নে বর্তমানে শাস্তি ৬ মাস থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড বা এক থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের কথা বিদ্যমান আইনে বলা আছে। আবার সংশোধনীতে সর্বোচ্চ জরিমানা কমিয়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে।
অন্যদিকে নকল, ভুয়া বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের শাস্তি বর্তমানে ৬ মাস থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড বা এক থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। সংশোধিত খসড়ায় তা সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিলের পর মোটরযান চালালে বর্তমানে শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড আছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে তা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ট্রাফিক সাইন বা সংকেত না মেনে চলার শাস্তি বর্তমানে সর্বোচ্চ ১ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড আছে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। এক্ষেত্রে কারাদণ্ড উঠিয়ে জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা।
বিদ্যমান আইনের ১০৫ ধারায় মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে তা ‘পেনাল কোড ১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, ‘পেনাল কোড ১৮৬০’ এর সেকশন ৩০৪বি-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে, ওই ব্যক্তি (দায়ী) সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলা আছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় ‘গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হওয়া’র বিষয়টি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। জরিমানাও ৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিএসডি/এমএইচএস/জেএস/ওএফ