ইউটিউব দেখে এটিএম বুথ লুটের পরিকল্পনা করেন আরিফুল

রাজধানীর শাহজাদপুরে মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী হাসান মাহমুদকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত মো. আরিফুল ইসলামকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। তাকে গ্রেপ্তারের পর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। মূলত ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় প্রথমে কিডনি বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে পরবর্তী সময়ে ইউটিউব দেখে আরিফুল এটিএম বুথ লুটের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষীকে তিনি হত্যা করেন বলে জানায় ডিবি পুলিশ।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন গত ১০ এপ্রিল ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে অজ্ঞাত আসামি শাহজাদপুর প্রগতি সরণির মাইশা চৌধুরী টাওয়ারে মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড হাসান মাহমুদকে কুপিয়ে হত্যা করেন। নিহতের ভাই মাহফুজুর রহমান রুমেল অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গুলশান থানায় মামলা রুজু করেন।

এর মূল ঘটনা উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশ, সিআইডি এবং অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি ডিবি গুলশান জোনাল টিম মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তদন্তকালীন তথ্য প্রযুক্তি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, আসামির ব্যবহৃত মোবাইল ও পরিহিত পোশাক এবং গোয়েন্দা সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে হত্যাকারী আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত ১০/১২ বছর ধরে বিভিন্ন অফিস ও বাসা বাড়ির আসবাবপত্র পরিবহনের কাজ করতেন তিনি। দুই-তিন বছর আগে তিনি তার বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শে এ ব্যবসার পাশাপাশি ইট, বালু ও পাথর সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। এ ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তিনি ১৪/১৫ লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি তার একটি কিডনি বিক্রির চেষ্টা করে মিরপুর এলাকায় লিফলেট ছাড়েন। কিন্তু কিডনি বিক্রি করতে না পারায় এবং পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা তার বাসায় গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন।

পাওনাদারদের চাপে ও ভয়ে সে গত ৩/৪ মাস ধরে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। টাকা পরিশোধ কীভাবে করা যায় সেই চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি এটিএম বুথ লুট করার উদ্দেশ্যে পাশবিক কায়দায় এটিএম বুথের বয়োবৃদ্ধ নিরাপত্তাকর্মী হাসান মাহমুদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।

ইউটিউব দেখে বুথ লুটের চেষ্টা

ডিবি প্রধান বলেন, ইউটিউবের মাধ্যমে ব্যাংক/এটিএম বুথ ডাকাতির দৃশ্য দেখতে পেয়ে খুন করে হলেও এটিএম বুথের টাকা লুট করার পরিকল্পনা করেন আরিফুল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট থেকে হাতুড়ি ও ছেনি, মিরপুর পল্লবী মিল্লাত ক্যাম্প মোড় থেকে চাপাতি, সাবল, চাকু ও মিরপুর স্টেডিয়ামের ফুটপাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একটি জার্সি ক্রয় করেন। এরপর নিরিবিলি এলাকায় অবস্থিত এমন একটি এটিএম বুথের সন্ধান করতে থাকেন।

তিনি বলেন, গুলশানের শাহজাদপুরে মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথ নিরিবিলি মনে হওয়ায় তিনি এটি লুট করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১০ এপ্রিল ভোর আনুমানিক ৫টা ১৩ মিনিটের দিকে বুথে প্রবেশ করার সময় নিরাপত্তাকর্মী হাসান মাহমুদের বাধার সম্মুখীন হন। পরে আরিফুল তাকে চাপাতি দিয়ে গলায় কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, সাবল ও চাপাতি দিয়ে এটিএম বুথ ভাঙার চেষ্টা করেন।

একপর্যায়ে প্রায় ১০/১২ মিনিট চেষ্টা করে এটিএম বুথ ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে ব্যবহৃত হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, সাবল, চাপাতি ও ব্যাগ ঘটনাস্থলে রেখে একটি ছোট চাকু নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আরিফুল। এরপর ভোর ৫টা ৩১ মিনিটের দিকে অছিম পরিবহনের বাসে উঠে মিরপুরের দিকে চলে যায়।

এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি-না জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আরিফুল ইসলামই এ ঘটনায় জড়িত। তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এমএসি/কেএ