নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি নেই একুশেও

>> বাজারে আমদানি কম হওয়ায় এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু
>> ভোজ্য তেলের দাম বিগত বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে
গেল বছর (২০২০ সাল) নিত্যপণ্যের বাজার ছিল অস্থির-অস্বস্তির। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সাধারণ মানুষকে চড়া দামে নিত্যপণ্য কিনতে হয়েছে পুরো বছরজুড়ে। পেঁয়াজ, চাল, আলু এবং সবজির দাম নিয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের। পাশাপাশি অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজারও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে চড়া।
শীতে আমদানি বাড়ায় সবজির বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো চড়া মূল্যে আলু, চাল, আটা ও তেল কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। তবে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় গত দুইদিনে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা করে। ক্রেতারা বলছেন, বিশ পেরিয়ে নতুন বছর একুশ (২০২১ সাল) এলেও এখনো বাজারে ফেরেনি স্বস্তি।
শনিবার (০২ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর কাওরান বাজারসহ আরও কয়েটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রিতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, টমেটো (লাল) ৮০, আর কাঁচা ৩০ টাকা, শিম ৪০-৫০, গাজর ৫০, শসা ৬০, পেঁয়াজ ১০০, মুলা ২০ টাকা দরে। এছাড়া বেগুন ৪০-৬০, বরবটি ৮০, করলা ৬০ টাকা, মটরশুটি ১০০ টাকা, পেঁপে বড় পিস ৩০ টাকা, ফুলকপি মাঝারি আকারের প্রতি জোড়া ৫০ এবং প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবধরনের শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকায়। এদিকে আলুর দাম কিছুটা পরিবর্তন হলেও এখনো কোথাও কোথাও ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে অধিকাংশ জায়গায় আলু ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া ডিম (লেয়ার) প্রতিডজন ৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ১০ টাকা কমে ১৩০ টাকা, গরু মাংস ৫৫০, খাসি ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া মাছের বাজারে রুই ২২০ টাকা, শোল ৪৫০, আর কাতলা মাছ কেজি ২৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে চাল ও তেলের বাজার চড়া। বোতলজাত প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল ১২৫ টাকা করে।
চাল মিনিকেট পাইকারি ৬২ আর খুচরা ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সর্বনিম্ন চাল পাওয়া যাচ্ছে ৫২ টাকায়।
দেশি পেয়াঁজ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা, আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০, ভারতীয় পেঁয়াজ কিছুটা দাম কমে প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মুনিপুরীপাড়া থেকে কাওরান বাজারে আসেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে এসে সবজির বাজার এমন হলে আমরা জীবনযাপন করব কিভাবে? এখন আলু ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। শীতের এমন সবজির দাম আর কখনো দেখিনি।
নাখালপাড়া সমিতি বাজারে কথা হয় অটোরিকশা চালক সোবান মিয়ার সঙ্গে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের গরীবের যত জ্বালা। দাম বাড়লে যাদের টাকা আছে তাদের তো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো সব আমাদের। এমনিতে করোনা তারপর বাজারে সবকিছু দাম বাড়তি এভাবে চলা যায়?
নাখালপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আলমিনের সঙ্গে নিত্যপণ্যের দর-দাম নিয়ে প্রশ্ন করতেই উচ্চস্বরে বলেন, ‘কাঁচাবাজার সকালেই এক দাম আবার বিকেলে আরেক দাম। এখন সবজির সিজন হলেও আমদানি কম হচ্ছে। সবকিছুর দাম একটু বাড়তি তবে আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। আলুর দাম আবার একটু বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগে একটু কম ছিল।’
মুদি দোকান ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান জানান, তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে আর তো কমছে না। আমার আগের কেনাগুলো ১২০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন নতুন যেগুলো আসছে এগুলোর দাম আরও বাড়তি সামনে দাম আরও বাড়বে মনে হচ্ছে।
কাওরানবাজার একজন আলু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আলুর চাহিদা বেশি হওয়ায় ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে হাতে-হাতে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। বাজারে নতুন আলু পাইকারি সর্বনিম্ন ২৮ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
কবির/এসএম