‘দুর্যোগ ঘিরে বেশি সংকেত থাকায় মানুষের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে’

দুর্যোগ ঘিরে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে এতবেশি সিগন্যাল সিস্টেম (সতর্কতা সংকেত) চালু নেই বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জলবায়ু পরিবর্তন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম।
তিনি বলেন, সংকেত সহজ করা হলে এধরনের দুর্যোগের ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। অন্য কোনো দেশেই এতো বেশি সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু নেই।
শনিবার (১ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাপার আয়োজনে ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা : আশু করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রফিকুল আলম বলেন, মোট তিন ধরনের সংকেত রাখার দরকার। হুঁশিয়ারি সংকেত, বিপদ সংকেত ও মহাবিপদ সংকেত। আর স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংকেতগুলো শেখানো উচিত। ঘূর্ণিঝড় ঘিরে এতো বেশি সংকেত থাকায় মানুষের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাইক্লোন চলে যাওয়ার পর সরকার সেই ক্ষয়-ক্ষতির ঠিকমতো কোনো হিসাবও রাখে না। উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। যেকোনো সাইক্লোন শুরুর আগে উপকূলীয় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঢালাওভাবে প্রচার করা হয় দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে জেলাতে বরাদ্দ আছে মাত্র ৬ লাখ টাকা। এটি জাতির কাছে প্রহসনের শামিল। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে আরো কয়েকটি সাইক্লোনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য যথেষ্ট খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ উপকূলীয় জেলাগুলোতে মজুত রাখা দরকার।
মূল প্রবন্ধে দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, এবারের সাইক্লোনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি এক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের তিন জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় পুরোপুরি এবং কিছু এলাকায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ। এতে বাঁধসংলগ্ন নিচু এলাকা উপচে লোকালয়ে নোনা পানি প্রবেশ করেছে; শত শত গ্রামে চিংড়ির ঘেরসহ ফসলি জমিতে নোনা পানি প্রবেশ করেছে। বরিশাল অঞ্চলে কমপক্ষে ৪০০ জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। নোয়খালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহু স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে নোনাজল ঢুকে মিষ্টিজলের আধারগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ভাটার টানে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সামনের আমন মৌসুম ধরতে হলে মাঠ থেকে জলাশয় থেকে দ্রুত নোনাজল বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাম্প করে এই পানি বের করার ব্যবস্থা করা যায়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো মেরামত করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের মালিকানায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার সভাপতিত্ব করেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুলের সঞ্চালনায় বাপার সহ-সভাপতি মুহদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক নুর আলম শেখ বক্তব্য দেন।
আরএইচটি/জেডএস