বছরের সবচেয়ে ছোট রাত আজ, মধ্যদুপুরে দেখা যায় না ছায়াও
আজ দিনটি ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে আলাদা। এদিন সূর্যের আলো যেন অন্য সময়ের তুলনায় বেশি সময় পার করেছে। একটু দেরি করেই নিভেছে দিনের আলো। শুক্রবার এমন ঘটনার সাক্ষী ছিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ। শুধু তাই নয়, এদিনের রাতও হবে স্বল্পতম।
এককথায় চলতি বছরের (২০২৪ সাল) সবচেয়ে ছোট রাত আজ ২১ জুন। একই সঙ্গে সবচেয়ে বড় দিন অতিবাহিত হয়েছে। এটি হচ্ছে উত্তর গোলার্ধের চিত্র। অপরদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে আজ সবচেয়ে ছোট দিন ও বড় রাত।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, আজ সূর্যোদয় হয়েছে ৫টা ১২ মিনিটে আর সূর্যাস্ত গেছে ৬টা ৪৯ মিনিটে। সে হিসাবে শুক্রবার দিন ছিল ১৩ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট। আর দিবাগত রাত গিয়ে সূর্যাস্ত যাবে ৫ টা ১২ মিনিটে। সেই হিসেবে আজ রাতের দীর্ঘ হবে ১০ ঘণ্টা ২৩ মিনিট।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৃথিবী আসলে পুরোপুরি গোলাকৃতির নয়। দুই মেরুর কাছে পৃথিবী কিছুটা চাপা। এককথায় পৃথিবী চ্যাপ্টা আকৃতির। যখন একটি গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তখন উপবৃত্তাকার কক্ষপথের একটি কেন্দ্র হল সূর্য। তখন বিভিন্ন স্থানে সূর্যের আলোর তারতম্য হয়। এর ফলে এক এক গোলার্ধে দিন ও রাতের তারতম্য হয়। যেমন- সেপ্টেম্বর মাস থেকে দিনের দৈর্ঘ রাতের চেয়ে ছোট হওয়া শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর এবং ২১ মার্চ তারিখে দিন-রাত্রি সমান হয়। কেননা, এ সময় দিনে সূর্য বিষুবরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। পক্ষান্তরে ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দিন বড়, রাত ছোট হয়। আর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড়, রাত ছোট। একই সময়ে উত্তর গোলার্ধে হয় দীর্ঘতম রাত আর ক্ষুদ্রতম দিন। আর এ সময় শীতকালে সূর্য তীর্যকভাবে আলো দেয়।
এদিকে ২১ জুনকে অনেকেই বলেন কর্কটক্রান্তি দিবস। কেউবা অয়ন দিবস বলে থাকেন। ২১ জুন মধ্যদুপুরে মানুষ নিজের ছায়াও দেখতে পায় না। সূর্য যখন ঠিক কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর থাকে, তখন ছায়া কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়।
এ ছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনে পালিত হয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান। প্রাচীনকালে ইউরোপের মানুষ এই দিনটি থেকে তাদের বছর শুরু করত বলে জানা যায়।
প্রসঙ্গত, উত্তর গোলার্ধ হলো নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে অবস্থিত পৃথিবীর অর্ধাংশ। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের কারণে উত্তর গোলার্ধে শীতকাল সূর্যের দক্ষিণায়ন (সাধারণত ২১ ডিসেম্বর) থেকে মার্চের মহাবিষুব (সাধারণত ২০ মার্চ) পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর গ্রীষ্মকাল সূর্যের উত্তরায়ণ (সাধারণত ২১ জুন) হতে জলবিষুব (সাধারণত ২৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
দক্ষিণ গোলার্ধ হলো নিরক্ষরেখার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত পৃথিবীর অর্ধাংশ। দক্ষিণ গোলার্ধে পৃথিবীর ৫টি মহাদেশ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার নয়-দশমাংশ, আফ্রিকার দক্ষিণভাগের একাংশ এবং এশিয়ার কিছু দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ, চারটি মহাসাগর (ভারত, দক্ষিণ আটলান্টিক, দক্ষিণ মহাসাগর, এবং দক্ষিণ প্রশান্ত) এবং ওশেনিয়ার অধিকাংশ। এশিয়া মহাদেশের কিছু মহাদেশীয় দ্বীপও দক্ষিণ গোলার্ধের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের কারণে দক্ষিণ গোলার্ধে ডিসেম্বর হতে মার্চ মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল এবং জুন হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শীতকাল বিরাজ করে। সাধারণত সেপ্টেম্বরের ২২ বা ২৩ তারিখে এখানে মহাবিষুব এবং মার্চের ২০ বা ২১ তারিখে শারদীয় বিষুব হয়।
এমজে