পানি ধরে রাখতে একনেকে উঠছে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

ভূ-উপরিস্থ পানি ধরে রাখতে এক হাজার ১৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি ধরে রেখে সারাবছর সেচকাজের জন্য ব্যবহার করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মিঠা পানির মাছ চাষ বৃদ্ধি পাবে। এজন্য এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত খাল পুনঃখননের মাধ্যমে প্রাকৃতিক মাছের মাইগ্রেশন সহজ হবে। একনেক কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগামীকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
প্রকল্পের আওতায় ৩০ দশমিক ২০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ২৫ দশমিক ৫১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ২৬টি সেচ অবকাঠামো, ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (ফ্লাডওয়াল), একটি সেতু নির্মাণ এবং ৫৮ দশমিক ৯৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদ্য সাবেক সদস্য (সাবেক সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ একনেক কার্যপত্রে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকার গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর পানি নিষ্কাশন ও ধারণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে ফসল উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াবে। ২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ, ২৫ দশমিক ৫১ কিলোমিটার বাঁধ ও ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (ফ্লাডওয়াল) নির্মাণের মাধ্যমে নদীর ভাঙন রোধ করে আকস্মিক ও মৌসুমি বন্যা হতে প্রকল্প এলাকার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল রক্ষা করা যাবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বিদ্যমান খালগুলো ভরাট হওয়ার কারণে বর্ষার পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। যাতে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে এবং জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা দেখা দেয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে ভূ-পৃষ্ঠের পানির চরম সংকট দেখা দেয়। ফলে কৃষি কাজ ব্যাহত হয়।
শিকলবাহা-মুরালী-বোয়ালখালী নদীর ডান তীর ও চান্দখালী নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হলে এবং পানি নিয়ন্ত্রণ ও সেচ কাঠামো নির্মাণের ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার হাত থেকে বসতবাড়ি, কৃষিজমি এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষা পাবে এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ করার মাধ্যমে পটিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর পানি নিষ্কাশন ও ধারণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে ফসল উৎপাদনের নিবিড়তা ১৯৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত করা। এছাড়া ১১টি খালে ৩০ দশমিক ২০ কিলোমিটার পুনঃখনন করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো হবে। পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামোগুলো নির্মাণ করার মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৩২০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া এবং ২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ২৫ দশমিক ৫১০ কিলোমিটার বাঁধ ও ৪ দশমিক ১০০ কিলোমিটার ফ্লাডওয়াল নির্মাণের মাধ্যমে নদীর ভাঙন রোধ করে আগাম বর্ষায় আকস্মিক বন্যা ও মৌসুমি বন্যা থেকে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এসআর/এইচকে