রোহিঙ্গা শিবিরে লাইটিং সল্যুশন দিল বিয়ন্ড২০২০

সংযুক্ত আরব আমিরাত পরিচালিত জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ ‘বিয়ন্ড২০২০’ সম্প্রতি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে তাদের সৌরশক্তি চালিত লাইটিং সল্যুশন কার্যক্রম শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর জীবন আলোকিত হয়েছে।
সন্ধ্যার পর নিরাপত্তা বৃদ্ধি, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক কার্যক্রমের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ‘বিয়ন্ড জেনারেশনস’, ‘বিয়ন্ড বর্ডারস’ ও ‘বিয়ন্ড লিমিটস’-এ গিয়ে, বিয়ন্ড২০২০ টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রচেষ্টার আওতায় প্রযুক্তি সরবরাহ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নানা গুরুত্বপূর্ণ ও জীবনরক্ষাকারী সমাধান দিয়ে আসছে।
ফ্রান্সভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি প্রাইজ ২০২০-এ ‘এনার্জি’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ‘ইলেকট্রিশিয়ানস উইদাউট বর্ডারস’-কে বিয়ন্ড ২০২০ এর পক্ষ থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবিরে প্রযুক্তি স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নবায়নযোগ্য শক্তি ও উদ্যোগমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে হাজারো শরণার্থীর জীবনমান উন্নত করে ইতোপূর্বে পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ‘লাইট ফর দ্য রোহিঙ্গাস’ শীর্ষক প্রকল্প শেষ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের মানবিকতার দৃষ্টান্তকে অক্ষুণ্ণ রাখার ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বিশ্বের মোট নয়টি দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে টেকসই প্রযুক্তি ও সমাধান দিচ্ছে বিয়ন্ড২০২০ প্রকল্প। এসব সমাধান বা প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জীবনে পরিবর্তন এনেছে। সবগুলোই জায়েদ সাস্টেইনেবিলিটি প্রাইজের বিজয়ী কিংবা ফাইনালিস্টের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
বিয়ন্ড২০২০ শীর্ষক উদ্যোগ প্রসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তিমন্ত্রী ড. সুলতান আহমেদ আল জাবের বলেন, ‘দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়া বিয়ন্ড২০২০ উদ্যোগের মূলনীতির অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ন্ড ২০২০ এর এই গুরুত্বপূর্ণ লাইটিং সল্যুশনের সূচনা করতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এটি নিঃসন্দেহে জনগোষ্ঠীর প্রাত্যহিক জীবনকে আরো সহজ ও নিরাপদ করে তুলবে। তাদের জন্য আরও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আর্ত জনপদের কাছে জায়েদ সাস্টেইনেবিলিটি প্রাইজের বিজয়ী ও চূড়ান্ত প্রতিযোগীদের টেকসই-উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলোকে পৌঁছে দিতে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাব।’
বিয়ন্ড২০২০ এর দ্রুত অগ্রগতি, অধ্যবসায় ও সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্ব এখন বৈশ্বিক মহামারি দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশন (ইউএনএইচসিআর)-এর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডের ক্লাউ বলেন, ‘টেকসই এনার্জি সল্যুশনের প্রশ্নে বিয়ন্ড২০২০ উদ্যোগটি যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধনে এমন মহতী একটি দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতের অন্ধকার দূর করে নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের জন্য এই প্রকল্পটি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তির বর্ধিত ব্যবহারের মত টেকসই প্রযুক্তির উপযোগিতা গঠন বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর’এর অন্যতম অগ্রাধিকারের বিষয়।’
ইলেকট্রিশিয়ানস উইদাউট বর্ডারস শরণার্থী শিবিরে ২৪০টি সোলার হোম সিস্টেমস ও ৬৪০টি সোলার ল্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিষেবা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পের আওতায় তাদের আন্তর্জাতিক দক্ষতা সরবরাহ করেছে। পাশাপাশি এসব বাসিন্দাদের নিজ নিজ পরিবারের জন্য সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ, গর্ভবতী নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপসহ বাংলাদেশে সকল শরণার্থীর উন্নয়ন বিয়ন্ড২০২০ এর মূলমন্ত্র।
এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অংশ হিসেবে নেপাল, তানজানিয়া, উগান্ডা, জর্দান, মিশর, কম্বোডিয়া, মাদাগাস্কার ও ইন্দোনেশিয়াতে শক্তি, স্বাস্থ্য, পানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে মোট আটটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কাজের জন্য বাংলাদেশ ছাড়া আরও ১১টি দেশকে বাছাই করা হয়েছে।
বিয়ন্ড২০২০’র মাধ্যমে একটি ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের শক্তি তৈরি হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে আরব আমিরাতভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেমন- আবু ধাবি গ্লোবাল মার্কেট, আবু ধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট, মুবাদালা পেট্রোলিয়াম, দ্য মিনিস্ট্রি অব টলারেন্স অ্যান্ড কোএক্সিস্টেন্স, মাসদার ও বিএনপি পারিবাস।
ওএফ
