ফোন করলেই বাসায় আসে হাসপাতাল

ফোন করলেই বাড়িতে হাজির চিকিৎসক। সঙ্গে দুইজন নার্স। প্রয়োজন হলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে উপস্থিত থাকেন দুই ব্রাদার। চাইলে ফিজিওথেরাপিস্টও চলে আসেন। এক ফোনকলে ঘরকেই মিনি হাসপাতালে রূপান্তর করেন তারা। পুরো প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে হোম হসপিটাল। ব্যতিক্রমী এ হাসপাতালের উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালেরও প্রধান উদ্যোক্তা।
ব্যতিক্রমী এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার চিন্তা থেকেই হোম হসপিটালের কাজ শুরু করেছি। করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়েও চিকিৎসা নেওয়া কষ্টকর । করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে শরীর খারাপ হওয়ার আগেই চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন তাই হোম হসপিটাল দিয়ে কাজ শুরু করেছি। এর আগে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছি। বিপদের সময় বাসায় চিকিৎসক-নার্স পেয়ে রোগী ও স্বজনদের স্বস্তি পাওয়ার দৃশ্য আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

হোম হসপিটাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫টি বাসায় গিয়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার নেতৃত্বে রোগী দেখেন হোম হসপিটালের সদস্যরা। এছাড়া তাদের রয়েছে টেলি মেডিসিন সেবাও। হোম হসপিটালের হেল্প লাইনে ফোন করে বাসায় বসে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন সেবাগ্রহীতারা। সেবা দিতে ফেসবুকেও রয়েছে তাদের একটি পেজ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেবা দেওয়া শুরু করে হোম হসপিটাল। এ পর্যন্ত ৪৫০ জন রোগীকে বাসায় গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই করোনা আক্রান্ত রোগী।
প্রশিক্ষিত নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়ে ১০ জনের চিকিৎসক টিম চট্টগ্রাম মহানগরে রোগীর স্বজন হয়ে কাজ করছেন। নারী চিকিৎসকসহ তিনজন চিকিৎসক ,ফিজিওথেরাপিস্ট ও ডেনটিস্ট, নার্স ও ব্রাদার রয়েছেন এই টিমে। রোগীর অসুস্থতার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে যান টিমের সদস্যরা। রোগীর অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সব সেবা দেওয়া হয়। এমনকি চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে হাটহাজারী, পটিয়া ও রাউজান উপজেলায় গিয়েও সেবা দিয়েছেন হোম হসপিটালের সদস্যরা। বাসা থেকে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কাজটিও করা হয় হোম হসপিটালের পক্ষ থেকে।
চট্টগ্রামের হিলভিউ এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল হক সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পরিবারের আমিসহ পাঁচজন করোনা আক্রান্ত ছিলাম। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর রাত নয়টার দিকে হোম হসপিটালের ফেসবুক পেজ থেকে নম্বর নিয়ে ফোন দিলে বাসায় এসে তারা চিকিৎসা দিয়ে যান। এরপর একদিন রাত ২টার দিকে আমার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তখন আবার বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে ফোন দিলে হোম হসপিটালের সদস্যারা অক্সিজেন নিয়ে আসেন। চিকিৎসা দিয়ে যান। যখন ফোন দিয়েছি তখনই এসেছেন। খুব আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দেন তারা। করোনা যে ভয়ের কিছু নয় বিদ্যুৎ বড়ুয়ার চিকিৎসা পাওয়ার পরই বুঝছি। ওনারা বাসায় ওষুধ এনেও দিয়েছেন, আমরা বিল দিয়েছি। করোনার এই ক্রান্তিকালে এতো সহজে এমন চিকিৎসাসেবা পাওয়া সত্যি বিরল ব্যাপার। তাদের চিকিৎসা সেবায় আমরা সুস্থ হয়ে উঠছি।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা সানজিদ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ও আমার ৬০ বছর বয়সী বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাবার অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। তখন বন্ধুর কাছ থেকে হোম হসপিটালের কথা শুনে তাদের নম্বরে ফোন করি। ফোন করার এক ঘণ্টার মধ্যে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়াসহ অন্য সদস্যরা বাসায় চলে আসেন। হোম হসপিটালের কারণেই বাসায় আমাদের চিকিৎসা হয়েছে। আমরা বাবা এবং আমি এখন সুস্থ। করোনার এমন ভয়াবহতার সময় ঘরে বসে এমন চিকিৎসাসেবা পেয়ে আমরা আনন্দিত।
হোম হসপিটালের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ডা.বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, আইসিইউ সমৃদ্ধ দুইটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে মানুষকে সেবা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। যেখানে জরুরি মুহূর্তে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই অ্যাম্বুলেন্স রেখে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। এছাড়া যাদের বাসায় মানুষ থাকে না তাদের বাসায় ওষুধ পৌঁছে দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে যে দামে ওষুধ ক্রয় করা হয়, সে মূল্যই রাখা হয়।

তিনি বলেন, যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না তাদের ফ্রিতেই চিকিৎসাসেবা দেয় হোম হসপিটাল। এছাড়া বাসায় গিয়ে রোগী দেখলে চিকিৎসক ফি ১ হাজার টাকা ও সার্ভিস ফি ১ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের কাছ থেকেই এ ফি নেওয়া হয়।
কেএম/এসকেডি
