বাড়িফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে আমিনবাজারে

করোনার বিস্তার ঠেকাতে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ, সেজন্য সরকার অন্যান্য শর্তের মধ্যে দূরপাল্লার গণপরিবহনও বন্ধ রেখেছে। তারপরও ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা ছাড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। অন্যসময় ঈদের আগে সপ্তাহে রাজধানীর গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে বেশ ভিড় থাকতো, কিন্তু এবার একেবারেই ফাঁকা।
তবে আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। শতাধিক মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানে সহজেই মিলছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নির্দেশনার পর গত ১৪ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ চলছে দেশে। সরকারের এ বিধিনিষেধ চলবে ১৬ মে পর্যন্ত। তবে বিধিনিষেধ থাকলেও বাড়ি ফেরা মানুষদের কোনোভাবেই আটকে রাখা যাচ্ছে না রাজধানীতে। গাবতলী থেকে কোনো গাড়ি ছেড়ে না যাওয়ায় ঘরে ফেরা মানুষগুলো ছুটছে আমিনবাজারে। আমিনবাজার গেলে সহজেই মিলছে দেশের বিভিন্ন রুটের প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল।
শনিবার (৮ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চেপেই যাত্রীরা যাচ্ছেন আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটের দিকে। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রশাসনের তৎপরতায় যাত্রীদের গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার গিয়ে ঘাটের গাড়ি ধরতে হচ্ছে।
মো. জালাল নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের এ লকডাউন কবে শেষ হবে বোঝা যাচ্ছে না। বাড়িতে (বগুড়া) গিয়ে ঈদ করবো, তাই চলে যাচ্ছি। এছাড়া বর্তমানে আমার কাজ-কাম না থাকাও বাড়ি ফেরার অন্যতম কারণ। দূরপাল্লার কোনো পরিবহন চলছে না, তাই মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছি। এখান থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যাব প্রাইভেট কারে, তারপর নদী পার হয়ে ওই পার থেকে গাড়িতে ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাব।
কবির নামের গাইবান্ধাগামী আরেকজন বলেন, ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। সবসময় রোজার ঈদটা মা-বাবার সঙ্গে বাড়িতে করি। তাই প্রত্যেকবারের মতোয় এবারও ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। তবে গণপরিবহন চললে যেতে সহজ হতো। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগে।
রুমা নামে মাগুরাগামী একজন চাকরিজীবী জানান, বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। অফিস অনেককে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে আমিও আছি। ছুটি যেহেতু পেয়েছি সেহেতু বাড়িতে চলে যাচ্ছি, ঈদ করতে। তবে অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে আবার ঢাকায় ফিরবো।
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা বাস্তবায়নে গত ৫ এপ্রিল থেকে প্রথম রাজধানীসহ সারাদেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া রাস্তাঘাটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশনা ছিল প্রথম দিকে। এরপর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় দিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ এপ্রিল থেকে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে। তবে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা গত ৫ এপ্রিল থেকে কয়েক দফায় ১৬ মে বাড়ানো হয়। করোনা মহামারি বাড়ার ফলে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এরপর কঠোর স্বাস্থ্যবিধির পরিপ্রেক্ষিতে বিধিনিষেধ শিথিল করে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস চালুসহ দোকানপাট খুলে দিয়ে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এবারের বিধিনিষেধ চলবে ১৬ মে পর্যন্ত।
এসআর/এসএম