ঢাকা পোস্টের নিউজ শেয়ার করায় চাকরি খোয়ান পুলিশের অনেক সদস্য!

পুলিশ সদস্যদের সুযোগ সুবিধা, দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশের পর তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে চাকরি হারিয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। তাদের অভিযোগ, ওই নিউজ শেয়ার করে উচ্ছ্বাস, একমত, লাইক ও কমেন্টস করার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
গত ১৫ বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা ঠুনকো কারণে চাকরি হারানো পুলিশের হাজারো সদস্য রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুর থেকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখানে এমন অভিযোগ করেন বেশ কজন পুলিশ সদস্য।
তাদের একজন সিআইডিতে থাকাকালে চাকরি খোয়ানো এএসআই সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকা পোস্টে একটি রিপোর্ট হয়েছিল। ওই রিপোর্টে আমাদের সাধারণ পুলিশের অনেক সদস্য অনেক খুশি হয়েছিলেন। কারণ পুলিশের সাধারণ সদস্যদের নানা দাবি দাওয়া, অভাব, সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে উঠে এসেছিল। অনেকে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ওই রিপোর্টটি ফেসবুকে শেয়ার করায়, কেউ আলহামদুলিল্লাহ বলে কমেন্টস করায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘ছুটি নেই বেতনেও টান, অতঃপর আত্মহত্যা!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট।
আরও পড়ুন
সাদ্দাম হোসেন বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ স্যারের সময় সবচাইতে বেশি পুলিশ নিগৃহীত হয়েছেন। তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন কিন্তু পুলিশ সদস্যদের জন্য কিছু করেননি। উল্টো পুলিশ সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়েছেন। ডোপ টেস্টের নামে পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেছেন। যারা ডোপ টেস্টের ফাঁদে পড়ে চাঁদা দেননি তারা চাকরি হারিয়েছেন।

সাদ্দাম বলেন, নিউজ শেয়ার করে আমি আলহামদুলিল্লাহ লিখেছিলাম। বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ আরও দশ বছর সম্ভবত প্রমোশন পাবো না। এমন অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। ওই মামলায় আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে অবস্থানরত চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা বলেন, আমাদের এক দফা এক দাবি, নির্বাহী আদেশে চাকরি ফেরতে দেওয়া। বিশেষ করে অভিযোগের পর আদালতে ও বিভাগীয় তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও চাকরি হারিয়েছেন তাদের অনতিবিলম্বে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
মুক্তার নামে এক পুলিশ সদস্য বলেন, আমি ব্যারাকে থাকতাম। ঢাকা পোস্টের ওই রিপোর্টটি ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছিলাম ‘বাস্তবসম্মত’।
এরপর আমাকে ডেকে নেওয়া হয়, কারণ দর্শানোর নোটিশ করে। পরে আমার কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব সন্তোষজনক নয় বলে চাকরিচ্যুত করা হয়।
পুলিশ সংক্রান্ত, পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত একটি নিউজ শেয়ার করাই কি আমার অপরাধ? এমন একটি নিউজ শেয়ার করে কি আমি চাকরি হারাতে পারি? এটা আমার প্রতি অবিচার। অথচ আমার মতো ওই সময় অন্তত অর্ধশত সাধারণ পুলিশ সদস্যকে একই অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল বলে জেনেছি।

কনস্টেবল জুয়েল বলেন, ২০২২ নভেম্বরে চাকরি যায়। মাদারীপুর সদর থানায় কর্তব্য পালনকালে টাকা দাবির মামলা হয়। ওই মামলায় কোর্ট থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েও আমার চাকরি যায়। বিভাগীয় মামলাতেও নির্দোষ প্রমাণিত হই কিন্তু আমি চাকরি ফেরত পাইনি।
সিনিয়র কর্মকর্তারা আমার প্রতি অবিচার করেছেন। আমার পুরো পরিবার পথে বসেছে। বিভাগীয় মামলার তদন্তে এবং কোর্টে থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও কেন আমাকে চাকরি দিতে বলা হলো না তার জবাব এতদিন আমি পাইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। আমি মনে করি নতুন আইজিপি ও অন্তর্বর্তী সরকার আমার মতো যেসব পুলিশ সদস্যর প্রতি অন্যায় করা হয়েছে তাদেরকে চাকরিতে বহাল করার ব্যবস্থা করবেন।
পুলিশ সদস্যরা জানান, আমরা এক সপ্তাহ ধরে পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরপাক খাচ্ছি। কোনো সুরাহা না পেয়ে আজকে আমরা পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিসহ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
জেইউ/এমএ